সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
”এই মেলা মস্ত বড় মেলা। এই মেলা কুম্ভের থেকে কোনও অংশে কম নয়। কেন্দ্রকে বারবার জাতীয় মেলা করতে বলেছি। তাদের এই স্বীকৃতি দেওয়া উচিত ছিল। আমরা বহুবার অনুরোধ করেছিলাম। এই মেলায় যেতে হয় জল পেরিয়ে। আমরা দশ সাল থেকে সেতুর দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র দিল না। আমরা তাই ১৫০০ কোটি টাকা খরচে চার লেনের গাড়ি চলাচলের সেতু করছি। এর টেন্ডার হয়ে গেছে। এর ডিপিআর হয়ে গেছে।” এভাবেই আরো একবার গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী জানানোর পাশাপাশি কুম্ভ মেলাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলেও বাংলার গঙ্গাসাগরকে কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করছে বলে অভিযোগ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বাবুঘাটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলা শুরু দু’দিন আগেই গঙ্গাসাগরে নিজেই গিয়েছিলেন মমতা। এদিন বাবুঘাটে এসেও গঙ্গাসাগর মেলা সম্পর্কে কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার বাবুঘাটে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”যতক্ষণ কাজ না শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ সজাগ থাকতে হবে। গতবার প্রায় এক কোটি মানুষ এসেছিলেন মেলায়। কুম্ভমেলা আছে এবার। সেখানে কেন্দ্র হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা দেয়। মেলা সংযুক্ত রেল, বিমানের মাধ্যমে। আর এখানে পরিবহণ জল মাধ্যমে। এ্খানে সব মানুষকে জলের ওপর নির্ভর করতে হয়। ২০১১ সালে এসে দেখি, সাগর মেলায় কিচ্ছু নেই। পরিষ্কার করা হত না। যদিও তীর্থকর নেওয়া হত। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে সব খরচা নিজেরাই করছে। সেখানে ১২ জন মন্ত্রী থাকবে। বায়ো টয়লেট, থাকার জায়গা, এখন সব কাজ করা হয়েছে। ভীড় নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
এদিনের বক্তৃতায় স্বামী বিবেকানন্দের কথাও তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ”স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি থেকে লোকানন্দজী মহারাজ এসেছেন। স্বামীজীকে সামনে রেখেই এই ক্যাম্পের কাজ আমরা শুরু করি। অনেক ইতিহাস নতুন তৈরি হবে। অনেক ইতিহাস পেরিয়ে যাবে। কিন্তু স্বামীজীর শিকাগো বক্তৃতার তুলনা হবে না। যারা আগে নিজেদের সম্মান পেতেন না। তাদেরকে সমাজে তুলে নিয়ে এসে সম্মানিত করেছেন তিনি।”
গঙ্গাসাগর মেলায় প্রচুর ভিড়ে অনেক সময়ই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। তাই এবিষয়ে বারবার সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, ”জলে কেউ তাড়াহুড়ো করবেন না। ভেসেলে বা বার্জে কতজন যেতে পারবেন তা ভাল করে দেখে নেবেন। এটা একটা মহাযজ্ঞ। ভাবলাম আর হয়ে গেল, সেটা হবে না।
২০১০ সাল থেকে আমি বারবার এটাকে জাতীয় মেলা ঘোষণার দাবি করছি। এই মেলা কঠিন।
১৪ তারিখ সকাল থেকে ১৫ তারিখ সকাল অবধি স্নানের পবিত্র সময়। তবে গঙ্গায় স্নান রোজ পবিত্র। চার থেকে পাঁচ হাজার বাস ট্রিপ। ২১ জেটি, ৯ বার্জ, ৩২ ভেসেল থাকছে। সব পরিবহণ জিপিএস কানেক্টেড। সব যাত্রী ট্র্যাকিং করা যাচ্ছে। ১৬ বাফার জোন হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থায়। অতিরিক্ত গতি ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা। এক টিকিটেই যাতায়াত করতে পারবেন।”
আরও বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সাগরে এখন প্রচণ্ড ঠান্ডা। শীতে চলাচলের জন্য ভেসেলে বিশেষ আলো থাকছে সাগর মেলায়, জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাষার কারণে যাতে কারও সমস্যা না হয় সেজন্য থাকছে সাগর বন্ধু বা সাগর দোস্ত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”এবার ড্রেজিং দারুণ হয়েছে। তাই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০ ঘন্টা ভেসেল চলবে। আমাদের ৩০০০ ভলান্টিয়ার থাকবে। বহু এনজিও থাকবে। আমরা তিন মাস আগেই এর প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। আমি নিজে প্রস্তুতি দেখে এলাম।”
গঙ্গাসাগর মেলায় প্রতি বছর কোটি কোটি ভক্ত সমাগম হয়। তাই স্বাস্থ্য শিবির থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ” ৯ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ অবধি সকলের জন্য বিমা করে দেওয়া হয়েছে। ৫১৫ বেডের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির থাকছে। যেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, এয়ার অ্যম্বুলেন্স, ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স, ১০০ অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা থাকছে। এছাড়া প্রয়োজনে গ্রীন করিডর করা থাকবে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ”আমি গিয়ে আশ্রমকে অনুরোধ করেছি। আমরা তো টাকা দিই উন্নয়নের জন্য। ওরাও যেন মন্দির রক্ষায় গার্ডওয়ালের কাজ করে। ওনারা আমাকে জানিয়েছেন, ওনারা এই কাজ করবেন। আগুন থেকে সাবধান। ক্যাম্পে যেন দূর্ঘটনা না ঘটে। আগুন থেকে বাকি ক্যাম্পের যেন ক্ষতি না হয়। যে সব এনজিও খাবার দেন, তারা যেন বাইরে থেকে খাবার রান্না করে আনেন। সাধুদের অনুরোধ আপনারাও একটা জায়গায় এই কাজ করুন। কাউকে চিন্তা করতে হবে না। আমাদের রাজ্যের অতিথি হয়ে আসুন। নিজেদের ঘর ভাবুন এই রাজ্যকে। যেখানে যা দর্শন করার সেটা করুন। কাউকে চিন্তা করতে হবে না। আপনার পরিবার, আমাদের পরিবার।”
গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে বাইরের রাজ্য থেকে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় সামলাতে প্রশাসন প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। দু’দিন আগে গঙ্গাসাগরে শেষবেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়েই মমতা জানিয়েছিলেন, বাবুঘাট, প্লট-৮, কচুবেড়িয়া, মেলা প্রাঙ্গনে মন্ত্রী-আমলাদের ভাগ করে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবারও সেই কথার উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীরাও হাজির ছিলেন।
মেলা প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালিয়ে রান্নাবান্না না করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশিই, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি পূণ্যার্থীদের খাবার দিতে আসে, তাদের উদ্দেশে রান্না করা খাবার আনার কথা বলেছেন মমতা।