শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কয়েক দশক ধরে চলে আসেন মাফিয়া রাজ বন্ধ করার জন্য চোখ বন্ধ করে তাঁর উপরে ভরসা রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরাশ করেননি মনোজ ভার্মা। বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের অনুগামী করে পরিচিত অবাঙালি চটকল শ্রমিকদের মধ্যে যারা তোলাবাজি চালিয়ে এসেছে দীর্ঘদিন সেই সমস্ত মাফিয়াদের দমন করার জন্যে বুক চিতিয়ে লড়ে গিয়েছেন একা।
২০১১ সালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে যখন জঙ্গলমহলে মাওবাদী সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন মমতা, অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছিলেন সেই দায়িত্ব।
এবারেও যখন কলকাতা পুলিশ আরজিকরের ঘটনার প্রেক্ষিতে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে শুরু করেছে, এই সময় দক্ষ আইপিএস অফিসার মনোজ ভার্মার চওড়া কাঁধে কলকাতা পুলিশের দায়িত্ব তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মনোজ ভার্মাকে কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দায়িত্ব নিলেন মঙ্গলবারেই।
কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার করা হল মনোজ বর্মাকে। তিনি ১৯৯৮ ব্যাচের আইপিএস অফিসার। মনোজ রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) পদে নিযুক্ত ছিলেন। এর আগে মনোজ কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব সামলেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন জানিয়ে দেয়, মনোজকেই কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার করা হচ্ছে।
কলকাতার সদ্য প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে পাঠানো হয়েছে এডিজি (এসটিএফ) পদে। একই সঙ্গে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের একাধিক পদে বদল আনা হয়েছে।
১৯৬৮ সালে মনোজের জন্ম। সেপ্টেম্বরই তাঁর জন্মমাস। ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মদিন। রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুরে জন্ম। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা মনোজ ২০১৯ পর্যন্ত দার্জিলিঙের আইজি ছিলেন। তার পরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দায়িত্বে। ভাটপাড়া এবং কাঁকিনাড়ায় গোলমালের সময় তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একটা সময়ে মনোজ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন। তখনও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার। সেই সময়ে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদীদের কার্যকলাপ তুঙ্গে। মনোজ সেই কার্যকলাপ রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন। এর পর ডিআইজি পদমর্যাদায় উন্নীত হয়ে মনোজ চলে যান শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে। তার পর দার্জিলিঙের আইজি। সেটা ২০১৭ সাল। পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সেই সময়ের আন্দোলনও মনোজ সামলেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে।
https://www.facebook.com/share/r/avU75CfDw7gCzFqh/?mibextid=qi2Omg
২০১৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও খুন-মারামারি-গন্ডগোল লেগেই থাকত। সেই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার মনোজকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রধান করে পাঠায়। ব্যারাকপুরের সিপি হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মনোজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ব্যারাকপুরে থাকাকালীন একাধিক বার তাঁকে জরুরি পরিস্থিতিতে ‘অ্যাকশনে’ নামতে দেখা যায়। এক বার ভাটপাড়ায় গোলমালের সময়ে হেলমেট না পরেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন। হাত দিয়েই ইট-পাটকেল আটকানোর চেষ্টা করেন মনোজ। সেই সময় বাহিনী এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা না করে খালি হাতে অ্যকশনে নামার জন্য তাঁর ভূমিকা কিছুটা সমালোচিতও হয়। তবে মনোজ সে সবকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি কখনও।
২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের পুলিশ পদক পেয়েছিলেন মনোজ। পরে ২০১৯ সালে পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ পদক। ওই বছর স্বাধীনতা দিবসে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ওই পদক দেন। ভাটপাড়ায় শান্তি ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই মনোজকে ওই পদক দেওয়া হয়েছিল।