শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস পরে আরজিকর মামলায় রায় ঘোষণা করেছে শিয়ালদহ আদালত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সিবিআই এর তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে শিয়ালদহের বিশেষ আদালত গ্রেপ্তার হওয়ার সেভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে প্রধান এবং একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেছে আর জি কর মামলায়। কিন্তু তারপরেও নির্যাতিতার পরিবারের পাশাপাশি সঞ্জয়কে একা দোষী মানতে নারাজ সিপিএম এবং বিজেপি।
সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদহ আদালত জানিয়েছে, আগামী সোমবার সাজা ঘোষণা করা হবে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাঁসির সাজা হয়। তবে তিনিও সন্দেহ করেন, আরজি করের ঘটনা একা সঞ্জয় রাইয়ের পক্ষে করা সম্ভব নয়।
শিয়ালদহ আদালত যে রায় দিয়েছে তা শুনে শুভেন্দুর বক্তব্য, ”এটা একটা আংশিক বিচার। শুরুটা ভালই হয়েছে, তবে আরও অনেকটা এগোতে হবে। বিচার সম্পূর্ণ করতে হবে।” এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ডিএনএ রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক রিপোর্টের কথা তুলে ধরে দাবি করেন, বোঝাই গেছে এই ঘটনা একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। একাধিকজন জড়িত থাকতে পারে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্ন নেই। একজন এই কাজ করলে তার চিহ্ন থাকার কথা। শনিবার আদালত যে রায় দিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানিয়ে অমীমাংসিত বিচারের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে শুভেন্দু বলেন, এই মামলায় আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে অভিযুক্ত ঘোষণা করা হলে তিনি আরও বেশি খুশি হতেন।
প্রথম থেকেই সকলের মধ্যে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল যে, শুধুই কি সঞ্জয় রায়? এর পেছনে কি আর কেউ নেই! আর এবার আদালতের নির্দেশের পর সেই ব্যাপারেই সংশয় প্রকাশ করতে দেখা গেল বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে। তিনি বলেন, “আদালত সঞ্জয় রায় কে দোষী সাব্যস্ত করেছে। যদি সঞ্জয় রায় দোষী হয়ে থাকে, তাহলে আমরা চাই অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। কিন্তু আমাদের আশঙ্কার কারণ, কলকাতা পুলিশের হাতে প্রথম পাঁচ দিন তদন্ত ছিল,তখন অনেক তথ্য-প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই যদি সঠিক তথ্য প্রমাণ থাকত, তাহলে হয়ত অন্য কিছু হত।”
তবে একা সঞ্জয় নয়, আরও একাধিক ব্যক্তি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছেন আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “অন্য কেউ কিছু আশা করেনি। ক্লাস সিক্সের ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেও সেও এই কথাই বলত। সঞ্জয় রাইকে দোষী সাব্যস্ত করার মধ্যে কৃতিত্বের কিছু নেই। সিবিআই অন্য কাউকে ধরতে পারেনি। এটা সিবিআই-এর চূড়ান্ত ব্যর্থতা।”
সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। অধীর বলেন, “অপরাধী একজন নয়। মুখ্যমন্ত্রী জানেন,সিপি জানেন। কোর্ট কী করবে? তথ্য প্রমাণ যা থাকবে তার ভিত্তিতে সাজা দেবে। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ কিছু করেনি। সিবিআই গা ভাসিয়ে ছিল। পরিকল্পিত চক্রান্ত হয়েছে। সন্তুষ্ট হওয়ার জায়গা নেই। এটা ষড়যন্ত্র। আরও বড় মাথা আছে। সব মাথার একটাই ছাতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাঁসির সাজা হতেই পারে। কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারলাম না।” সিবিআই-কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “সিবিআই-এর অদক্ষতা। উদাসীনতা আছে। পুলিশ তথ্য দেয়নি। পুলিশ সিবিআই একযোগে কাজ করত তাহলে এমন হত না।”