সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“বাংলার বাড়ি, ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র দেয় না। কেন্দ্র টাকা দেয় না, কিন্তু আমরা ভিক্ষা চাইব না। আমরা অধিকারের সঙ্গে লড়াই করি, সম্মানের সঙ্গে লড়াই করি। নিজেদের টাকা দিয়ে রাজ্যের মানুষকে বাংলার বাড়ির দিয়েছি। যারা এখনও পায়ননি তারাও আগামিদিনে পাবেন।” এভাবেই বৃহস্পতিবার হাসিমারা সুভাষিনী চা বাগানের কর্মসূচি থেকে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবারের সভা থেকে একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ডুয়ার্সের চা বাগানের ১০৮ কোটি ৭৩ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা করেন মমতা। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে এ দিন ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষজনকে ঘর দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে অনেক বন্ধ চা বাগান খুলে গিয়েছে। আগামীদিনে আরও চা বাগান খুলবে। তিনি বলেন, “আমাদের কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা সম্মানের সঙ্গে আপোস করি না। আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৫০টি শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১২ লক্ষ মানুষকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও অর্ধেক টাকা ডিসেম্বরে দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে আরও ১৬ লক্ষ মানুষকে এই অর্থ দেওয়া হবে। তাঁরা ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তি পাবেন।”
নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি নয় কেন?
আজও নেতাজির মৃত্যু রহসের সমাধান না হওয়ার জন্য নাম না করে কেন্দ্রকে দুষলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সঙ্গে প্রশ্ন তুললেন, নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি নয় কেন? আলিপুরদুয়ারে সুভাষিণী চা বাগানের মাঠে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি শাঁখ বাজিয়ে জাতির নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কালচিনির সভা থেকে নেতাজিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেই তাঁর অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে সুর চড়ালেন তিনি। এদিন ফের তিনি দাবি করলেন, “নেতাজি চক্রান্তের শিকার। রাজ্যের কাছে থাকা এই সংক্রান্ত ৬৪ টি ফাইল প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্র কেন গোপন ফাইল প্রকাশ্যে আনছে না?
“দুঃখ হয় যে আমরা নেতাজির জন্মদিন জানি। তাঁর কী হল, কোথায় হারিয়ে গেলেন জানি না। ওঁর মৃত্যুদিবস জানি না আমরা। উনি বড় চক্রান্তের শিকার। দেশের জন্য কত লড়াই করেছেন। অথচ সেই মানুষটা কোথায় হারিয়ে গেল। আমরা আর ফিরে পেলাম না। এই দুঃখ রয়ে যাবে।”
পাশাপাশি মমতা বলেন, “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক, আমাদের চিন্তার নায়ক, দেশনায়ক। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি তৈরি করেছিলেন উনি। প্ল্যানিং কমিশন নেতাজির তৈরি, যা এখন তুলে দিয়েছে। জয় হিন্দ স্লোগান নেতাজির। নেতাজি বলতেন, সব ধর্মকে মিলিমিশে থাকতে হবে, সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। হাবিব সাহেব, শাহনওয়াজ খান ওঁর সহযোগী ছিলেন। আজকের এই দিনটি আমরা দেশনায়ক দিবস হিসেবে পালন করি। তিনি দেশপ্রেম, সাহস, নেতৃত্ব, ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। নেতাজি সব প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। আমরা রাজ্যজুড়ে প্রতিবারই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালন করি। তবে এবারই প্রথম তরাই-ডুয়ার্স থেকে জাতির নায়ককে শ্রদ্ধা জানানো হল। উনি আমাদের দেশের বীর নায়ক। তিনি প্ল্যানিং কমিশন গঠন করেছিলেন। অথচ এখন সেটা তুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নেতাজি-সহ দেশের শহিদদের স্মৃতিতে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারকে আলিপুর মিউজিয়ামে পরিণত করেছে রাজ্য।”
মমতাকে বলতে শোনা যায়, “সুভাষচন্দ্র বসু আইএনএ-র যে আদর্শ ঠিক করেছিলেন, তার শহিদ স্মারকে খোদাই করে লেখা ছিল বিশ্বাস, ঐক্য এবং ত্যাগ। তাঁরা আমাদের পথ দেখান। তাঁরা আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন। কী করে ভুলব! সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’। দেশের জন্য আর কে এমন বলতে পারে?”
মমতার প্রশ্ন, নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি নয় কেন? নেতাজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে এই প্রশ্ন আগেই তুলেছিলেন। এ ব্যাপারে সে সময় কেন্দ্রকে চিঠিও দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।