সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
“আজও যতই ডিজিটাল আসুক, বইয়ের কথা কেউ ভুলতে পারি না। যে বাড়িতে বই সাজানো থাকে না, কী কী রকম একটা লাগে। বই ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড।” এভাবেই ৪৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বেশি করে বই পড়ার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী নতুন লেখক, লেখিকাদেরও উৎসাহিত করে বলেন, অনেকে বলেন উনি ছোট লেখক, উনি বড় লেখক। কিন্তু ভুললে চলবে না, অনেক ছোট লেখক-লেখিকাদের হাত দিয়েও অনেক সুন্দর লেখা বেরোয়। প্রত্যেক লেখকের সৃষ্টিই স্বকীয়তায় সম্পূর্ণ।বই মানে বই-ই। এখানে কোনও ভেদাভেদের জায়গাই নেই।
বইমেলার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির রাষ্ট্রদূত। এবারের বইমেলার প্রধান গেট হয়েছে ঋত্বিক ঘটক-সলিল চৌধুরীর নামে। তবে এই প্রথম কলকাতার বইমেলায় থাকছে না বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন। ৪৮ তম কলকাতা বইমেলায় রয়েছে এক হাজারেও বেশী বুক স্টল।
আজ থেকে শুরু হয়ে গেল কলকাতা বইমেলা। প্রতিবারের মতো এবারও সল্টলেকের সেন্ট্রাল বইমেলার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবছর বইমেলার থিম জার্মানি। মেলা চলবে ৯ ফ্রেরুয়ারি পর্যন্ত। আগামীকাল বুধবার থেকে বইমেলার যেতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ৯ ফ্রেরুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। মেলায় প্রবেশের জন্য মোট ৯ টি প্রবেশ পথ। মেলায় মোট স্টল ৬৫৫। মেলায় দৈনিক পুলিশ কর্মী দেড় হাজার। মেলায় ৩ প্রান্তে ৩ টি ওয়াচ টাওয়ার। দমকলের গাড়ি ছাড়াও দুটি ফায়ার কমব্যাট বাইক। লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ৩০০০ বর্গ ফুট প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ। বইমেলা উপলক্ষ্যে শহরে ২০ রুটে চলবে স্পেশাল বাস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ফ্রাঙ্কফুট বইমেলা খুবই জনপ্রিয়। আমি ফ্রাঙ্কফুট, মিউনিক গিয়েছিলাম। অন্যন্য় শহরেও গিয়েছিলাম। আমি খুব ভালো করেই জানি। তবে আমাদের দেশে কলকাতা আন্তর্জাতির বইমেলা অন্যতম সেরা বইমেলা। জার্মানির সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বসুর গভীর যোগাযোগ ছিল। তাঁর মেয়ে অনিতা জার্মানিতে থাকে। আমি দেখা করেছিলাম। নেতাজিকে স্যালুট করি।”
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা বই, বইমেলাকে বলি, বইবৃক্ষ। বৃক্ষ যেমন হাজার হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দে। বৃক্ষ কিন্তু অনেক ঘটনার সাক্ষী থাকে। বৃক্ষ কথা বলতে পারে না। শুনতে পায়, দেখতে পায়। বই কিন্তু কথা বলে, বই কিন্তু দেখতে পায়। আজও যতই ডিজিটাল আসুক, বইয়ের কথা কেউ ভুলতে পারি না। যে বাড়িতে বই সাজানো থাকে না, কী কী রকম একটা লাগে। বই ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড। বই আমাদের প্রেরণা, আমাদের আশা, আমাদের দিশা। সারা পৃথিবীর হোক, দেশ হোক, রাজ্য় হোক, সমস্ত নথি বই থেকে পাই। তাই বইমেলাকে আমরা এত ভালোবাসি।”
জাগো বাংলার থিম এবার মা মাটি মানুষ। এই থিম নিজেই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ”আমি অর্জূন গাছ লাগাতে বলেছিলাম। থিম আমার নিজের করা। কুলঙ্গীতে যেমন বই থাকে। আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করি।” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আমরা বইমেলাকে স্থায়ী জায়গা দিয়েছি। আগে তাদের নানা জায়গায় ঘুরতে হত। বইবৃক্ষ যুগ যুগ ধরে মহীরুহ। ডিজিটালকে অস্বীকার করা যাবে না। আমরা আধুনিক হচ্ছি। কিন্তু বই ভালোবাসুন।”