শৌভিক তালুকদার। কলকাতা সারাদিন।
মাত্র দু’মাস হল আমেরিকার মসনদে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। আর তাতেই চ্যালেঞ্জের মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে পথে নামলেন হাজার হাজার মানুষ। ট্রাম্প-বিরোধী আন্দোলনে কার্যত উত্তাল আমেরিকার একাধিক শহর। শুল্কনীতি থেকে ব্যাপক ছাঁটাই নিয়ে যেমন প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন দলে দলে মানুষ, তেমনই নাগরিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ থেকে মেরুকরণের অভিযোগ তুলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সকলে।
গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ট্রাম্প। আর দু’মাস কাটতে না কাটতেই চ্যালেঞ্জের মুখে তাঁর সরকার। ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, হিউস্টন, ফ্লোরিডা, কলোরাডো, লস অ্যাঞ্জেলস, ম্যানহ্যাটন-সহ একাধিক শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। ম্যানহ্যাটনের বাসিন্দা, পেশায় চিত্রশিল্পী শায়না কেসনার বলেন, “রাগ সামলাতে পারছি না আমি। মাথা পুরো ঘেঁটে গিয়েছে। সবসময় রেগে থাকছি। কিছু সুবিধাবাদী শ্বেতাঙ্গ লোকজন, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ পর্যন্ত আছে, তারা আমাদের দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে, আমেরিকার জন্য যা একেবারেই শুভ নয়।” (Anti Trump Protests)
বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে উড়ে এসেও ওয়াশিংটনে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ডায়ান কলিফ্রাথ বলেন, “বাস-ভ্যানে চেপে নিউ হ্য়াম্পশায়ার থেকে অনেকে এসেছেন। ভয়ঙ্কর অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছেন সকলে। এদের জন্য পৃথিবীর সর্বত্র বন্ধু হারাচ্ছি আমরা। এখানে সাধারণ মানুষজনও রক্ষা পাচ্ছেন না। আমাদের দেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে।”
মুখে স্লোগান, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিলে পা মেলান কাতারে কাতারে মানুষ। কলোরাডোর এক বাসিন্দার প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমেরিকায় রাজতন্ত্র চলবে না’। এক মহিলা প্রতিবাদী ‘দ্য হ্যান্ডমেড টেল’ উপন্যাসের চরিত্রের মতো সেজে রাস্তায় নামেন। তাঁর হাতে দরা পতাকায় লেখা ছিল, ‘আমার জরায়ু থেকে দূর হয়ে যাও’। ট্রাম্পের গর্ভপাত নীতির বিরোধিতায় এমন বার্তা দেন তিনি। আমেরিকার বিভিন্ন শহর তো বটেই, ইউরোপের একাধিক জায়গাতেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন বহু মানুষ। লন্ডনের মিছিলে যোগদানকারী আমেরিকার নাগরিক লিজ চেম্বারলিন বলেন, “আমেরিকায় যা হচ্ছে, তাতে প্রত্যেকে সমস্য়ায় পড়ছেন। অর্থনৈতিক উন্মাদনা শুরু হয়েছে। গোটা পৃথিবীকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন উনি (ট্রাম্প)।” বার্লিনে ৭০ বছর বয়সি সুজ্যান ফেস্ট বলেন, “সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করছেন ট্রাম্প। উনি পুরোপুরি উন্মাদ। ”
MoveOn, Women’s March-এর মতো সংগঠনের তরফে দেশের ১০০০ শহরে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন দেশের সাধারণ ভোটারও। ক্ষমতায় এসে একাধিক সরকারি বিভাগ তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প, ব্যাপক ছাঁটাই করেছেন সরকারি কর্মীদের, শেয়ার বাজারে যেমন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তেমনই উদারমনস্ক মানুষের উপর জোর করে রক্ষণশীল নীতি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠছে। পড়শি দেশগুলির সঙ্গে অবনতি দেখা দিয়েছে আমেরিকার এতদিনের সম্পর্কে।
বস্টনে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ডমিনিক সান্টেলা সংবাদ সংস্থা AFP-কে বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদী ওই ব্যক্তিকে আটকাতে এসেছি। বিরোধীদের যাতে জেলে পুরতে না পারেন উনি, ধরে ধরে সাধারণ মানুষ, শরণার্থীদের যাতে জেলবন্দি করতে না পারেন, তাই এই প্রতিবাদ।” হোয়াইট হাউসের অনতিদূরে ন্যাশনাল মলে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন শনিবার। সেখানে বক্তৃতা করেন ডেমোক্র্যাট জেমি রাস্কিন। দ্বিতীয় বার ট্রাম্পকে ইমপিচ করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। জেমি বলেন, “সামান্য নীতিবোধ থাকলে কেউ অর্থনীতির এই হাল করে না। একজন স্বৈরাচারী শাসক, যিনি সবকিছু দাম জানেন, কিন্তু মূল্য বোঝেন না।”
সমাজকর্মী গ্রেল্যান হেগলার বলেন, “ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগিয়ে তোলা হয়েছে। এখনও অনেক কিছু বাকি। কিন্তু আমরা চুপচাপ বসে থাকব না। পালিয়ে যাব না আমরা।”
এর আগে, ২০১৬ সালে প্রথম বার যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প, সেই সংয় প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ওয়াশিংটনে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হন। এবারও বিক্ষোভের ঝাঁঝ ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার বিকেলেই ওয়াশিংটনে ২০ হাজার মানুষ জড়ো হন বলে জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, গত দু’মাসে ট্রাম্পের প্রতি মানুষের সমর্থন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে মাত্র দু’মাসের মধ্যে এত সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নামলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, “আমি নীতি পাল্টাব না।”