সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
কসবায় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে নেমে এবারে কলেজেরই আরো এক নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করল তদন্তকারীরা। এর আগেই ধর্ষণে সরাসরি সহযোগিতা করার জন্য কলেজের এক নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এবারের কলেজের মর্নিং শিফটের নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হলো।
তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা জানতে পারে ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৫ জুন মর্নিং শিফটে দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও বিকেল চারটের পর থেকে রাত ৮:২৫ পর্যন্ত তিনি কলেজের মধ্যেই নাকি ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কেন তিনি নিজের ডিউটি আওয়ারের পরেও এত বেশি সময় কলেজের ভিতরে ছিলেন তা জানতে চাইছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ওই রক্ষীকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য এই মামলার তদন্তে প্রত্যেক সাক্ষীর বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কসবা ল কলেজের মধ্যে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারমধ্যে রয়েছে কলেজের রাতের নিরাপত্তারক্ষী। তিন অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, প্রমিত মুখোপাধ্যায়, জেব আহমেদের ফোন আগেই বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। রাতের নিরাপত্তারক্ষীর ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কথা বলেছে সবটা জানতেই ফোন বাজেয়াপ্ত কর হয়েছে। অভিযুক্তদের ফোন থেকে অনেক তথ্যই পেয়েছে পুলিশ।
আগামী ৮ জুলাই মঙ্গলবার কসবা আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সহ ধৃত চারজনকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। তিন অভিযুক্তকে ৮ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আর অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীকে শুক্রবার (৪ জুলাই) পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণে মেয়াদ শেষে ওই রক্ষীকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে আদালত তাঁকে আরও চারদিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এই ৪দিনে আরও নতুন কোনও তথ্য সামনে আসে কিনা সেটার জন্যই ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।
ইতিমধ্যে, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১৮ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে এবং পুলিশ তদন্তের স্বার্থে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। নিরাপত্তারক্ষীর ফোন বাজেয়াপ্ত করার পর তার কল ডিটেইলস, মেসেজ এবং অন্যান্য ডিজিটাল তথ্য যাচাই করা হবে। এর ফলে কসবা কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব প্রশ্নের উত্তর দ্রুত পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কসবা গণধর্ষণ মামলার মূল অভিযুক্ত মনোজিতের বান্ধবী বর্তমানে চরম মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সাল থেকে মনোজিতের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল, যা সমাজমাধ্যমেও বেশ পরিচিত ছিল। তবে, কসবার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। অভিযুক্তের বান্ধবী হওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে নেটদুনিয়ায় তীব্র হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তার ছবি ও নাম ছড়িয়ে দিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছে, যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

তিনি বলেছেন, “আর সহ্য করতে পারছি না,” এবং এই হেনস্থার জন্য বিচার চেয়েছেন। আইনজীবী পেশার সঙ্গে যুক্ত এই তরুণী, মনোজিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ শুনে বিস্মিত এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এই ধাক্কার মধ্যেই পরিচিত ও অপরিচিতদের কাছ থেকে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন তিনি। তার প্রশ্ন, একজন নারীর জন্য বিচার চাইতে গিয়ে অন্য একজন নারীকে কি এভাবে হেনস্থা করা যায়? এই আক্রমণের কি কোনো বিচার হবে? জানা গেছে, মনোজিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পাশাপাশি শ্লীলতাহানির একাধিক অভিযোগও রয়েছে। দীর্ঘ সাত বছরের সম্পর্কে এই বিষয়গুলো নিয়ে তরুণী কতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।