সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নির্দেশ মতো রাজ্য সরকার টেকনিক্যাল রিপোর্ট জমা দিতেই রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাজিতা বিল পাঠালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারপরে মুখ্যসচিবকে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চান। সেখানেই রাজ্য সরকারের তরফে এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে জানানো হয়েছে রাজভবনের বিবৃতিতে। তবে এই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য বকেয়া থাকা তিন রাজ্যে সঙ্গে যুক্ত হল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর যে কোনও বিল রাজভবনে পাঠানো হয়। সেই বিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর করলে তা আইনে পরিণত হয়। ৩ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় পাশ হয় অপরাজিতা বিল। এই বিল আইনে পরিণত হলে ধর্ষণে অভিযুক্তের দ্রুত সাজা হবে। তারপর তা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। বিল নিয়ে রাজ্যপাল যদি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে না পারেন বা তাঁর যদি কোনও পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তবে তা তিনি পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই বিলের ক্ষেত্রে তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতিই। গত ৩ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল’ পাশ হওয়ার পর তা রাজভবনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, এই বিলের ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ হাতে পাননি রাজ্যপাল। বস্তুত, রাজ্যের যে কোনও বিল নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারেন রাজ্যপাল। এই বিলের ক্ষেত্রে রাজভবনের বক্তব্য, টেকনিক্যাল রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। প্রত্যেকটি বিল যখন রাজভবনে পাঠানো হয়, নিয়ম অনুযায়ী, কেন সে বিল আনা হয়েছে, কী ভাবে আনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট বিলের সঙ্গেই পাঠানো হয়। রাজভবন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব অপরাজিতা বিলের টেকনিক্যাল রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রাজ্যপালের কাছে।
কী রয়েছে এই বিলে? Aparajita Bill 2024
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ও ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতায় যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, বাংলার ক্ষেত্রে, সেই আইনে কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। দ্রুত বিচারের জন্য শুধু বাংলার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধারা যোগ করা হচ্ছে এই বিলে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে রাজ্য়ে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার জন্য বেশকিছু বিধি যুক্ত করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই বিলে দ্রুত বিচারের বিধানের পাশাপাশি প্রত্যেক জেলায় বিশেষ আদালত ও অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স তৈরির সংস্থান রাখা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করার জন্য এই তদন্তকারী দলকে বিশেষ তদন্তকারী অফিসার ও রাজ্য সরকার যাবতীয় সাহায্য করবে। এই বিলে বলা হয়েছে, চার্জশিট জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার মূল আইনে যেখানে আর জি করকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার শেষ করার সময়সীমা ১ মাস রাখা আছে, এই বিলে ১ সপ্তাহের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে বলা আছে। মূল আইনে এক বছরের মধ্যে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা ছিল, রাজ্য সরকারের সংশোধনী বিলে সেটা সংশোধন করে ১ মাসের মধ্যে করার সংস্থান রাখা হচ্ছে। মূল আইনে কোনও থানায় ঘটনা নথিভুক্ত করার পর ২ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা আছে। সংশোধনী বিলে সেটি ২১ দিনের মধ্যে করতে হবে। যদি কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় ২১ দিনে তদন্ত শেষ করা গেল না তখন এই তদন্তকারী সংস্থাকে অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দেওয়া যাবে। তবে সেটা দিতে পারবেন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কেউ।