সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান বিক্ষোভে বড়সড় হামলার চক্রান্ত চালাচ্ছে বামেদের একটি যুব সংগঠন এবং অতি বাম একটি সংগঠনের দুই নেতার মধ্যে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে এমনই দাবি করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি সকালের শিরোনাম।
আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Incident) ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও মেলেনি বিচার। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। গত মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তারেরা। পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি এবার তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফাও চেয়েছেন।
এই অচলাবস্থা কাটাতে ইতোমধ্য়েই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাহায্য চেয়ে তাঁকে মেইলও করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আর এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করে জানালেন যে, এক বামপন্থী যুব সংগঠন ও এক অতি বাম সংগঠনের ভংয়কর চক্রান্ত করেছে ডাক্তারদের ধরনায় হামলা চালানোর। তাঁর নিশানায় রয়েছে বিজেপিও।
রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে বদনাম করতেই এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুণাল ঘোষ।
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, গতকাল জুনিয়র চিকিৎসকরা যখন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য গিয়েছিলেন, তখনই এই হামলা চালানোর কথা ছিল। কিন্তু কোনও কারণে সেই হামলা চালানো সম্ভব হয়নি। কুণাল ঘোষের দাবি, যে দুই সংগঠন মিলে এই চক্রান্ত সাজিয়েছে, তাদের সূত্রেই এই অডিও ক্লিপ শাসক দলের হাতে এসেছে।
” সাহেব অর্ডার করেছে সল্টলেক ওড়ানোর জন্যে।”
” অর্ডার করলে উড়িয়ে দে।”
পূর্ণাঙ্গ অডিয়ো প্রকাশ করে বিস্তারিত এই বিষয়ে কথা বলেছেন কুণাল। সেই অডিয়ো লিংকও দেওয়া হল এখানে।
“স- সাহেব অর্ডার করেছে সল্ট লেক ওড়ানোর জন্য।
ক- অর্ডার হলে করে দে।
স- সবাই প্রশ্ন করছে যারা পার্টনাররা আছে।
ক- যখন বলেছে, কিছু একটা ভেবেই তো বলেছে।
স- আমি এত বছর এই কাজ করেছি, কোনোদিন ভয়ডর লাগেনি কিন্তু এখন এটাতে বিবেকে লাগছে, করাটা কী ঠিক হবে, ওরা তো লোকের জীবন বাঁচায়।
ক- তোকে তো ফাইট টু ফিনিশ করতে বলেনি।
স- ছেলেরা মদ খেয়ে যায়, মারতে গিয়ে যদি বেহদ কিছু হয়ে যায় সেটা তো চিন্তার বিষয়।
ক- সেটা ওকে বল আমার এরকম মনে হচ্ছে কী করব।
স- বাপ্পাদাকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাপ্পাদা বলল জানোয়ার হয়ে যাইনি এখনও।
ক- ওই মত করেই কর।
স- দাদু বলছে নবান্ন তে মিটিং হয়নি, ওরা তো ফেরত চলে আসবে সল্ট লেকে, ভাববে শাসক মারটা মেরেছে।
ক- হুমম।
স-কী বলল কথাটা কিছু বুঝলে?
ক- হ্যাঁ, বুঝেছি।
স- বলছে পুরো দোষটা দিয়ে আরও অশান্তিটা পাকানো যাবে, কিন্তু কলকাতার কাউকে না, বাইরের। ঠিক আছে দেখছি ওরা তো ওখান থেকে প্রেস কনফারেন্স করছে, আমরা টিভি দেখছি কনটিনিউ, কী করব মাথা ফাটানোটা ঠিক হবে?
ক- দেখ খানিকটা যদি কিছু করা যায়, খানিকটা হলেও কি ব্যাপারটা থাকবে যে ওরাই এটা করালো।
স- দেখছি।”
এই অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘এটা একটা ভয়ঙ্কর চক্রান্ত। আমরা বার বার বলছি। জুনিয়র ডাক্তারদের সামনে রেখে যারা অন্য খেলা খেলছে, জুনিয়র ডাক্তারদের বলি দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। বৈঠক বাতিলের পর হামলা হলে এর দায় বর্তাবে সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের উপর। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে কোনও বহিরাগত যেন ঢুকতে না পারে। তৃণমূল বিরোধীরা জুনিয়র ডাক্তারদের বন্ধু সেজে ভিড় করছে।’
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বহু মানুষ জুনিয়র চিকিৎসকদের হাতে খাবার, পানীয় জল তুলে দিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গ তুলেই কুণাল ঘোষ বলেন, ‘খাবারে কেউ কিছু মিশিয়ে দিলে কে দায় নেবে? যা হবে সরকারের উপরে দায় বর্তাবে। জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে হামলা চালিয়ে সরকারকে বদনাম করার বিরাট চক্রান্ত চলছে।’
কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে বিজেপি এবং বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেককেই দেখা গিয়েছে। তাঁদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও পুলিশ এবং আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা।
অন্য়দিকে শুক্রবার চতুর্থ দিনে পা দিয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান। বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছেন। গায়ে বর্ষাতি চাপিয়ে ও মাথায় ত্রিপল ধরে দাঁড়িয়েই বিচারের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।