সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। রাজ্যের মধ্যে কোন অপরাধ মূলক ঘটনা ঘটলে তা তদন্তের প্রাথমিক অধিকার রাজ্য পুলিশের হাতেই রয়েছে। হাইকোর্ট যদি বিশেষ অধিকার কার্যকর করে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে কোন মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে সেই নির্দেশ নামার সঙ্গে লিখিতভাবে জানাতে হবে কেন তিনি রাজ্য পুলিশের তদন্তে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন এবং তার স্বপক্ষে কি প্রমাণ পেয়েছেন। এভাবে রাজ্যের অধিকারে যখন তখন হস্তক্ষেপ করা যায় না। পাহাড়ে জিটিএ-র নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল তা খারিজ করে আজ ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্য পুলিশেই আস্থা সুপ্রিম কোর্টের
সুপ্রিম কোর্টে বড় জয় পেল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলার রাজ্য পুলিশের উপরে আস্থা রেখে সিবিআই এর হাতে দিয়ে দেওয়া তদন্তভার কেড়ে নিয়ে আবার রাজ্য পুলিশের হাতে ফিরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই সঙ্গে যে কোন মামলায় যেকোনো অভিযোগ পেলেই রাজ্য পুলিশের হাত থেকে তদন্ত ভার কেড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সির হাতে দিয়ে দেওয়া যায় না বলে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের ভূমিকার সমালোচনা করলো সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের পর্যবেক্ষণ, “শুধুমাত্র খুব বিরল ক্ষেত্রেই এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। তাও হাইকোর্ট কেন পুলিসের তদন্ত অন্যায্য বা নিরপেক্ষ নয় মনে করার কারণ নথিভুক্ত করার পর। রাজ্য পুলিসের তদন্ত কেন যথার্থ নয়? হাইকোর্টকে বলতে হবে।”
এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা ভোট গ্রহণের দিনেই পাহাড়ে জিটিএ এলাকায় শিক্ষক নিয়োগ ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে দায়ের হওয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতির দেওয়া রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের রাজ্য সরকার গেলেও বহাল ছিল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ। এরপরে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। জিটিএ এলাকায় শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’। মামলা দায়ের করা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় সিবিআইকে প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চ। শুধু তাই নয়, আদালতে রিপোর্টও দিতে বলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। এরপর সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের মামলা করে রাজ্য। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখে বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চে।
প্রসঙ্গত, জিটিএ-তে বেশ কয়েকটি স্কুলে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের বেনিয়মে স্থায়ী করা হয়েছিল। পাহাড়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক। হাইকোর্ট সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিতেই জিটিএ-র নিয়োগ দুর্নীতিতে বিধাননগর উত্তর থানায় এফআইআর দায়ের করে রাজ্য। সেই এফআইআরে পার্থ সহ একাধিক তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে। এর ভিত্তিতে সিবিআই অনুসন্ধান বন্ধের আর্জি জানায় রাজ্য সরকার।