ডা: মো: হাফিজুর রহমান (পান্না), রাজশাহী, বাংলাদেশ।
‘আর্ট মানে আমার কাছে যুদ্ধ’ – এ স্লোগানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঋত্বিক আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সোমবার (০৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজশাহীর মহানগরীর মিয়াপাড়ার ঋত্বিকের পৈতৃক ভিটায় আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী আয়োজনে সভাপ্রধান ছিলেন ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। এছাড়া অতিথি ছিলেন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রবীণ সাংবাদিক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম।
অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ঋত্বিক কুমার ঘটক শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা নয়। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পথপ্রদর্শক। এমন একজন খ্যাতিমান ব্যক্তির নিদর্শন আমরা ধরে রাখতে পারছি না। তার বসতভিটাকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তার স্মৃতিচিহ্নকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বক্তরা আরো বলেন, ঋত্বিকের স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার অংশটুকুকে সংরক্ষণ করতে হবে। সেখানে ঋত্বিকের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার সংগ্রহশালা বা ঋত্বিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলতে হবে। ঋত্বিক ঘটকের বসতভিটা ভেঙে ফেলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে ঋত্বিকপ্রেমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসাথে কাজ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহীতে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে স্তূপাকারে শুধু ইটগুলো পড়ে আছে, স্মৃতিচিহ্নের আর তেমন কিছুই নেই। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশের সাংস্কৃতিককর্মীরা। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, যারা এ বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঋত্বিক ঘটক জীবনের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি সময় কাটিয়েছেন রাজশাহী মহানগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় তার এ পৈতৃক বাড়িতে। এ বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করেছেন। তাকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি, বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। এ বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি ১৯৮৯ ইং সালে সরকার রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেয়।
এরপর জায়গাটির উত্তরে গড়ে তোলা হয়েছে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। এ ভবনের দক্ষিণ অংশে ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়ির ঘরগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পতনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপিয়ে হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান পুরোনো স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যার প্রতিবাদস্বরূপ আজ সেই ধ্বংসস্তূপেরর মধ্যেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন ও সমবেত সঙ্গীতও পরিবেশন করা হয়।