সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে। এটা প্রশাসনের কাজ, প্রশাসন করুক। এটা মিডিয়া ট্রায়ালের ব্যাপার নয়।” উত্তরবঙ্গ সফর শেষে শুক্রবার ট্যাব কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ ছাড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রশাসন রাফ অ্যান্ড টাফ ভূমিকা নেবে।
পাহাড় সফর শেষে শুক্রবার বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই সিট গঠন হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করে মমতা বলেন ইতিমধ্যেই হ্যাকারদের তদন্ত করে গ্রেফতারও করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ট্যাব জালিয়াতিতে একজনের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, যাদের যাদের ট্যাবের টাকা গায়েব হয়েছে তাদের প্রত্যেককে প্রাপ্য টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আঙুল তুললেন ভিনরাজ্যের হ্যাকারদের দিকেও।
প্রসঙ্গত, ট্যাব কেলেঙ্কারির এপিসেন্টার উত্তর দিনাজপুর এমনটাই মনে করছে লালবাজার। কেলেঙ্কারির তথ্য যাচাই করে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শিক্ষা দফতর থেকে নথি চাওয়া হয়েছে। তদন্ত করতে বিকাশ ভবনে গিয়েছে কলকাতা পুলিশ। পুলিশের দলে রয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরাও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রশাসন রাফ অ্যান্ড টাফ, আমরাই প্রথম গ্রেফতার করেছি, আমরাই সিট তৈরি করেছি, সর্বোচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরা বিষয়টি দেখছেন”।
ডেটা এন্ট্রির দায়িত্বে কারা রয়েছেন, থার্ড পার্টি বা বাইরের কোনও এজেন্সি রয়েছে কিনা, তদন্তে নেমে জানতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। জানা যাচ্ছে, ট্যাবের টাকা জমা পড়ার ফ্লো চার্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্যাবের টাকা বণ্টনের ইনটিগ্রেটেড সিস্টেমে কীভাবে কারচুপি হয়ে থাকতে পারে, কীভাবে সরকারি পোর্টালের অ্যাকসেস মিলল, সবটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মহারাষ্ট্র থেকেও হাইজ্যাক করা হয়েছে। রাজস্থান থেকেও হাইজ্যাক করেছে। সব স্টেট থেকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। এই গ্রুপটাকে আমরাই ধরেছি। সুতরাং আমাদের স্টাফ সিট গঠন করেছেন। যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে। এটা প্রশাসনের কাজ, প্রশাসন করুক। এটা মিডিয়া ট্রায়ালের ব্যাপার নয়।”
প্রসঙ্গত, ট্যাবের টাকা গায়েবের ঘটনায় উঠেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ট্যাবের টাকা গায়েব হয়েছে এই সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ১৫০০ এরও বেশি। গোটা রাজ্য থেকে ১৫০০ এরও বেশি অভিযোগ স্কুল শিক্ষা দফতরে। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৮০০ এর মতো অভিযোগের সত্যতা পেল স্কুল শিক্ষা দফতর। অর্থাৎ প্রায় ৮০০ পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা গায়েব হয়েছে বলে সত্যতা পেয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর। বাকি ৭০০ টি অভিযোগেরও সত্যতা রয়েছে ট্যাব এর টাকা গায়েবের। স্ক্রুটিনি করছে স্কুল শিক্ষা দফতর।
রাজ্যের একাধিক জেলায় ট্যাবের টাকা গায়েবের জেরে এবার “অ্যাকাউন্ট ভ্যালিডেশন” করেই টাকা পাঠানো হবে, এমনই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ টাকা পাঠানোর আগে অ্যাকাউন্ট নম্বর ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম অ্যাকাউন্ট আছে কি না, তা যাচাই করা হবে। ব্যাঙ্ক এবং অর্থ দফতরের আধিকারিকরাই যাচাই করবেন। তারপরেই ট্রেজারির মাধ্যমে টাকা পাঠানো হবে। তরুণের স্বপ্ন, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, জয় জোহারের মতো প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নবান্ন।