শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
বাংলাদেশকে সেনা অভিযানের হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার একাধিক হিন্দু সংগঠনের ডাকে কলকাতার রানি রাসমণি রোডে হিন্দুদের সভায় বক্তব্য রাখার সময় নাম না করে বাংলাদেশকে আকাশপথে হামলার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ২০ জানুয়ারির পর বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে গোটা বিশ্ব।
বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি এবং সেই দেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের প্রতিবাদ। ওপার বাংলা অশান্ত। এপারেও প্রতিবাদ জিইয়ে রয়েছে এখনও। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সে বিক্ষোভ অরাজনৈতিক ব্যানারে। পোশাকি নাম সনাতনী ঐক্য মঞ্চ। পেট্রোপোল আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার রানি রাসমনি অ্যাভিনিউতে সনাতনীদের প্রতিবাদ সভায় সুর চড়ান শুভেন্দু। “এক দিনের মধ্যে ওদের হালুয়া টাইট করে দিয়েছি…” বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু কীভাবে? মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টা তুলে ধরেই একথা বলেছেন শুভেন্দু।
বাংলাদেশ ভারতের ওপর কোন কোন ক্ষেত্রে নির্ভরশীল, সে তথ্য তুলে ধরে শুভেন্দু বলেন, “বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্য হয় মাত্র ১১.২৫ বিলিয়ন। দশের পরে রয়েছেন আপনারা। আমাদের অর্থনীতি আপনাদের ওপর নির্ভর করে না। আর আমরা কটন পাঠাই, ফুড ইন্ডাস্ট্রি, শাক সবজি, আলু, ডিম, পেঁয়াজ সব মিলিয়ে ৯৭টা জিনিসের ওপর নির্ভরশীল আপনারা। নৌকো, লঞ্চের যন্ত্রও ভারত দেয়।”
বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “একদিনে পেট্রোপোল বন্ধ করেছিলাম। ৪০ গাড়ি পেঁয়াজ গিয়েছে পচে। এক দিনে হালুয়া টাইট করে দিয়েছি। এক্সপোর্টার, ইমপোর্টাররা সবাই হিন্দু। ওরা আমাকে বলছে, দাদা সাতটা আটকে দিতে পারলে না, এদের কী অবস্থা কী হবে দেখবে!” প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে গত সোমবার সীমান্ত বন্ধ করেন সনাতনীরা। সেই হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন শুভেন্দু। আর তার ফল যে ব্যাপক হয়েছে, সেটাই বোঝালেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা আরও একটু ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ২০ জানুয়ারি ২০২৫-এর পর বিশ্ব সমাজ বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে আসবে।”
শুভেন্দু বলেন, “বাংলাদেশ থেকে বলা হয়েছে, আমরা চাইলে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তর পূর্বাঞ্চল দখল করব। আর আমরা ওই জেহাদিদের বলি, আমরা অখণ্ড ভারত গড়ব। বড় বড় আওয়াজ? হাসিমারাতে ৪০টা শব্দদানব আছে ভারতের। তার মধ্যে ২টো পাঠিয়ে দিলেই পালানোর রাস্তা পাবে না। ৭১ সালে আমার সবে তখন জন্ম হয়েছিল। ইতিহাস পড়েছি। দেড় বছর লেগেছিল এই রাজাকারের বাচ্চা, হেফাজতের বাচ্চা এইসব ভারতবিরোধীদের সোজা করতে। আমাদের জন্যই বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। মনে নেই রাজাকারের বাচ্চা ৭১ সালে ৯৩ হাজার রাজাকার ধরা পড়েছিল ভারতীয় সেনার হাতে। আমরা সহিষ্ণু জাতি। তাই সবাইকে মুক্তি দিয়েছিলাম। আরেকটা ১৬ ডিসেম্বর আসছে। বিজয় দিবস। পাকিস্তানের জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ২০২৫ আসছে। হিন্দুরা আরেকটু চোয়াল শক্ত করে রাখুন। মুক্তিযোদ্ধারা আরেকটু ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ২০ জানুয়ারি ২০২৫এর পরে বিশ্ব সমাজ বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে আসবে। অবৈধ লোকেদের উৎখাত করব।”
প্রসঙ্গত, বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দেশে ফিরছেন অনেকে। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে, অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, সেদেশের যা পরিস্থিতি হিন্দুদের, তাতে এখান থেকে সব পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হোক। সেই প্রতিবাদের সুরই যেন এদিন শোনা গেল শুভেন্দুর গলায়।
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, রাজনীতি পরে হবে, আগে তো সবাই হিন্দু। হিন্দুদের বাঁচাতে হবে। বাঙালি হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি বলেই দাবি করেন তিনি।
শুভেন্দু বলেন, “বাঙালি হিন্দুরা এখনও ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। ভাবছেন এখানে হয়েছে, ওখানে তো কিছু হয়নি। অথচ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশে হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মহারাষ্ট্রেও হয়েছে। আমি আমার নির্বাচন কেন্দ্রে সবাইকে এক করে ফেলেছি। বলেছি, হিন্দু তুমি এক হও।”
শুভেন্দুর দাবি, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ৬৫ ভাগ হিন্দুকে এক করেছিলেন নন্দীগ্রামে। আর লোকসভা নির্বাচনে ৭২ ভাগ এক হয়েছে। কিন্তু গোটা বাংলায় তেমনটা হচ্ছে না। শুভেন্দুর অভিযোগ, এখানে একাধিক জায়গায় বিএসএফ-কে বেড়া করতে দেওয়া হয় না। পুজো করতে গেলে হাইকোর্টে যেতে হয়।