সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ৬২ দিনের মাথায় দোষীসাব্যস্তর ফাঁসির সাজা ঘোষণা। এবার মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ২ মাসে সাজা ঘোষণা। একজনের ফাঁসির সাজা হয়েছে। অন্যজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ফরাক্কাকাণ্ডে পুলিশি তদন্তের প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “জয়নগরে নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের মামলায় কয়েক দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার তৎপরতায় ৬২ দিনের মাথায় দোষীসাব্যস্তর ফাঁসির সাজা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর ফরাক্কায় এক নাবালিকাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। সেই ঘটনাতে এবার একজনের মৃত্যুদণ্ড হল। আর অন্যজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।”
এরপর মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, প্রত্যেক ধর্ষণের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। সেটা মৃত্যুদণ্ড। এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ রোধে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, দ্রুত এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাজা ঘোষণা হলে, অপরাধীদের কাছে কড়া বার্তা যাবে যে অপরাধকে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।” রাজ্য পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থায় জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। মৃত নাবালিকার পরিবারকে সমবেদনা জানান।
এর আগে কুলতলি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ৬২ দিনে সাজা ঘোষণার পরও পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কুলতলির ঘটনায় ২ মাসে সাজা ঘোষণার পর রাজ্যের শাসকদল রাজ্য পুলিশের প্রশংসা শুরু করে। সেই সূত্রে আরজি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের কথা টেনে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, “আরজি কর কাণ্ডে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করলে এতদিনে দোষীসাব্যস্ত হতেন অপরাধী।” ধর্ষণ বিরোধী অপরাজিতা বিল এখনও কেন দিল্লি অনুমোদন দিল না, সেই প্রশ্নও তোলে রাজ্যের শাসকদল।
আর জি কর মেডিক্যালের তরুণী চিকিৎসক মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে মাসচারেক। সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পরেও সুবিচার পাননি নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন। অথচ জয়নগর এবং জঙ্গিপুরে নাবালিকা ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডে প্রশংসাযোগ্য কাজ করেছে রাজ্য পুলিশ। মাত্র দুমাসের মধ্যে দোষীদের ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত।
আর সে কারণে অন্য রাজ্যের পুলিশ বাংলার তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতীম সরকার।
তিনি আরও বলেন, “এমন স্পর্শকাতর ঘটনায় এত দ্রুত বিচারের নজির অতীতে বাংলায় নেই। ভারতবর্ষে এর আগে এরকম দ্রুত বিচারের কটি ঘটনা আছে বা আদৌ আছে কিনা জানি না। তবে ইতিমধ্যে দেশের একাধিক রাজ্য থেকে আমাদের কাছে আনঅফিসিয়ালি খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। তাঁরা সকলে জানতে চাইছেন, কীভাবে এত দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল। যাঁরা তথ্য চাইছে আমরা তাঁদের তথ্য দেব।” জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বিচারকও এদিন তদন্তকারীদের প্রশংসা করেন।
গত ৮ আগস্ট, নাইট শিফট ছিল আর জি কর মেডিক্যালের তরুণী চিকিৎসকের। পরদিনই সেমিনার হল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে তাঁকে। এই ঘটনায় প্রায় দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে একজন মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে রাজ্যের নারী নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন ওঠে। রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ তদন্তভার নেয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিট না দেওয়ায় শুক্রবারই ধর্ষণ ও খুন মামলায় আর জি করে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পান। আর সেদিনই রাজ্য পুলিশের তৎপরতায় ২ মাসের মাথায় জঙ্গিপুর কাণ্ডে এক অভিযুক্ত ফাঁসি এবং আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য পুলিশের তৎপরতার প্রশংসা করছেন সকলেই।