রাহুল সিংহ মজুমদার। কলকাতা সারাদিন।
“নাম কা ওয়াস্তে শুধু পাইপ লাইন বসালেই হবে না। প্রতিটি বাড়িতে যেন জল পৌঁছয়, সেটাও দেখতে হবে। এটা প্রশাসনের দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।” এভাবেই রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কাজে তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রে খবর, ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। রাজ্যজুড়ে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জেলায় জেলায় বেশ কিছু জায়গায় পাইপ লাইন পৌঁছলেই জল মিলছে না বলে অভিযোগ।মঙ্গলবার নবান্নে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চাষের জন্য জল নিয়ে যাচ্ছে, আমি কৃষি দফতরকে বলব, সেচ দফতরকে বলব, তারা অন্য ব্যবস্থা করবে। এই জলের পাইপ কাটা যাবে না, যদি কোনওরকম কোনও অঘটন ঘটে, যাঁরা তারা বুঝবেন আগামীদিনে রেহাই পাওয়ার কোনও জায়গা নেই। আপনার পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কারণ আপনি দায়বদ্ধ মানুষের কাছে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কাজেই কোনও পঞ্চায়েতের কোনও অধিকার নেই বা কোনও ব্যক্তির কোনও জায়গায় আমি এটা পৌঁছতে দেব না। পৌঁছতে দিতে হবে, তা না হলে স্থানীয় স্তরে কেউ যদি মনে করে, কাউকে ম্যানেজ করে নিজেদের ম্যানেজ করবে, এটা হবে না। সে যেই হোক, তাঁদের মধ্যে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের, ক্যানিং -সহ বেশ কিছু ব্লকের সোনারপুর-২ গ্ৰাম পঞ্চায়েত-সহ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় পিএইচই ঠিকাদাররা পাইপলাইন পেতে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকারের খরচ করালেও সেখানে জল কোথা থেকে আসবে জানা নেই। সেই বিষয়গুলি নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ পৌঁছেছে মমতার কাছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঠিকাদাররা ডিপিআর করে দিচ্ছে মাটি পরীক্ষা না করে, অর্থাত্ যখন পাইপটা যাচ্ছে, দেখছেন ওখানে জল পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে আপনি ডিপিআরটা করলেন কী করে? তাঁদের বিরুদ্ধে এসটিএফ-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিজির নেতৃত্বে হবে। সেইসব ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৈঠকে পিএইচই-র কর্তাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছতে প্রশাসন দায়বদ্ধ। পাইপ যাওয়া মানেই জল সরবরাহ নয়। যে সব বাড়িতে জলের পাইপ লাইন গিয়েছে সেখানে সত্যি জল পড়ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কানেকশনগুলি রি-চেক করারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছানোর টার্গেট রয়েছে রাজ্যের। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ বাড়িতে জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কথা। ইতিমধ্যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজ্যজুড়ে সেই কাজও চলছে। পিএইচই-র দাবি ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ বাড়িতে সংযোগ পৌঁছে গেছে। যদিও তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পিএইচই দফতরে ইঞ্জিনিয়রের অভাব থাকলে প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়র নিয়োগের কথাও বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, সরকারি পদ্ধতি মেনে লোক নিতে গেলে ১ বছর লেগে যাবে। ততদিন কি মানুষ জল পাবে না। তাই প্রয়োজনে চুক্তিতে ইঞ্জিনিয়র নিয়োগ করতে হবে। পাইপ লাইনের কাজে কোনও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতির অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। একই সঙ্গে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় কলের মুখ খোলা রেখে জল নষ্ট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। মমতা বলেন, কোথাও কোথাও কলের মুখ খোলা থাকে। অনবরত জল পড়তে দেখা যায়। অনেকে কলের মুখ খুলে নিয়ে পালান। এ ব্যাপারে বিকল্প কী করা যায়, সেটা দেখতে হবে।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য দাবি, “জনরোষ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যখন মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন, পাহাড় থেকে সাগর পর্যন্ত মানুষ নির্ভয় হয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করছে। ঠিকাদারদার অংলগ্ন কাজকর্ম করছে, তার বিরুদ্ধে করছে। তখন মুখ্যমন্ত্রী সেফটি ভালভ হিসেবে এই ধরণের বিবৃতি দিচ্ছেন।” তাঁর কটাক্ষ, “ঠিকাদাররা কী করবেন? যে পরিমাণ ট্যাক্স তৃণমূল নেতাদের দিতে হয়, ঠিকাদারদের পক্ষে পুরো কাজ করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, জলের লাইন নেওয়ার সময় স্থানীয় মানুষ বাধা দেয়, ব্যবস্থা নেবে। এখানে বহু গ্রাম পশ্চিমবঙ্গে আছে, যেখানে জল পৌঁছয়নি। কারণ, তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে এই অবস্থার কোনও পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাহলে তৃণমূল দলটাই থাকবে না।”