শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
বাঘা যতীনের বিদ্যাসাগর কলোনিতে বহুতল হেলে পড়ার ঘটনার জন্য বাম আমলকেই দায়ী করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু এই গোটা ঘটনার জন্য কেবলমাত্র পূর্বতন সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলা কলকাতার মেয়রকে তৃণমূলের আমলে চলা এমনই আর কয়েকটা ঘটনার বিষয় তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ শানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। এরইমধ্যে এবার বিজেপির নিশানায় তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা চক্রবর্তীর সন্তোষপুরের হাতিবাড়ি।
এই ঘটনার জন্য গতকাল মেয়রের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, তৃণমূলের লোভের জন্য কিছু মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। কিন্তু আজ আবার এই ঘটনায় সরব হয়ে মেয়রের দায় ঝেড়ে ফেলার দাবিকে নস্যাৎ করে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
সুকান্ত মজুমদার, নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “শহরে অবৈধ নির্মাণের কারণ প্রসঙ্গে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের স্বনামধন্য মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাহেবের ব্যাখ্যা শুনছিলাম। গম্ভীর হয়ে রাজ্যের আপামর নিরুপায় মানুষকে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, জলাভূমি বুজিয়ে অবৈধ নির্মাণ থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রেই সব দোষ নাকি পূর্বতন সরকারের। যাবতীয় ‘অবৈধ’ – এর পাপ নাকি সততার প্রতিমূর্তি তৃণমূল সরকারকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ঘটনাক্রমে, কলকাতার আনন্দপুরে আরও একটি অবৈধ নির্মাণ দেখুন- ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস সংলগ্ন ফোর্টিস হাসপাতালের পাশেই সরকারি জলাজমি ভরাট করে কতটা নির্বিঘ্নে নির্মাণকাজ চলছে!”
কটাক্ষ করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, “এক্ষেত্রেও হয়তো এই বিষয়টি কলকাতা কর্পোরেশনের দৃষ্টিগোচর হয়নি, স্থানীয় কাউন্সিলর নিষ্পাপ, পুলিশ-প্রশাসন জানেই না, নির্লজ্জ মেয়রকে পূর্বতন সরকারের পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে!”
অন্যদিকে, তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা চক্রবর্তীর বাড়িতে বেআইনি বলে দাবি করে বিজেপি নেতার সজল ঘোষের অভিযোগ, প্রথমে একটি দোতলা বাড়ি কেনেন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা চক্রবর্তী। কিছু সময়ের মধ্যে ওই দোতলা বাড়ি হয়ে যায় ৫ তলা।
সজলের অভিযোগ, হাতিবাড়ির নেপথ্যে রয়েছে বেআইনি নির্মাণ। বাড়ি ভাঙার অর্ডার হলেও পরে লিগ্যাল করে দেওয়া হয়! সজল বলছেন, “অনন্যার নিজের নামেই রয়েছে ওই বাড়ি। দোতলা বাড়িটাই কোনওরকম লিগাল পেপার্স ছাড়া পরবর্তীকালে ৫ তলা হয়ে যায়। পরে পিছনের জমিটাও কেনেন। কয়েকটা এমআইসি মিটিংয়ের আগে এই বাড়িটাকে লিগ্যাল হিসাবে দেখিয়ে দেওয়া হয়।” প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক মাস ধরেই এই বাড়ি নিয়ে সন্তোষপুর, যাদবপুর, অজয়নগর চত্বরে মানুষের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। প্রাসাদোপম সেই বাড়ির সামনে বসেছে কংক্রিটের তৈরি বিশালাকার হাতির মুখ। সামনের বাকি নকশাও একেবারে চোখ ধাঁধানো। কিন্তু, কার বাড়ি কে করছে, কারা করছে তা নিয়ে চাপানউতোর ছিলই। এবার সেই বাড়ি নিয়েই বিস্ফোরক অভিযোগ বিজেপির।
প্রসঙ্গত, কলকাতার বাঘাযতীনে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে বহুতল। আর তাতে শিউরে উঠেছে রাজ্যবাসী। বহুতলটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা। এর ফলে বহুতলের বাসিন্দাদের মাথায় হাত। মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই ওই বহুতলটি হেলে পড়ে। স্থানীয়দের দাবি বেশ কয়েকদিন ধরে বহুতলটি হেলে পড়তে শুরু করেছিল। প্রোমোটারকে বিষয়টি জানাতে জ্যাক লাগিয়ে বাড়ির ভিত থেকে উঁচু করে সোজা করার জন্য এক সংস্থাকে বরাত দেন তিনি। কাজ চলায় বহুতলটি খালি করে আবাসিকদের ভাড়া বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। মঙ্গলবার মেরামতির কাজ চলার সময় হেলে পড়ে বহুতলটি ভেঙ্গে পড়ে।