সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর কাণ্ডে শিয়ালদহ আদালতের দেওয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়া নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী রাজ্যের আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার এই বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, “দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজ্য কীভাবে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে? এই ধরনের আবেদনের ভিত্তি কী?”
রাজদীপ মজুমদার আরও জানান, নির্যাতিতার পরিবার, সিবিআই, বা দোষী পক্ষের কেউ হাই কোর্টে আপিল না করলেও, রাজ্যের এই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি লালুপ্রসাদ যাদবের মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যেখানে হাই কোর্ট রাজ্যের আবেদনকে গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নেয়নি। তবে সিবিআইয়ের যুক্তির বিরোধিতা করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এবং সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায়। তাঁদের বক্তব্য, লালুপ্রসাদের মামলার সঙ্গে আরজি কর-কাণ্ডের তুলনা করা যায় না। সিআরপিসি ৩৭৭ এবং ৩৭৮ ধারার অধীনে রাজ্যের এই আবেদন আইনসঙ্গত বলেই দাবি করেন তাঁরা।
বুধবার হাই কোর্টে দোষী সঞ্জয় রাইয়ের এক আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আদালতে জানান, তিনি সঞ্জয়ের পক্ষে মামলা লড়তে চান। তবে সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। এ বিষয়ে বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানান, সঞ্জয়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে এবং ওকালতনামায় স্বাক্ষরের অনুমতিও দিতে হবে। তবে রাজ্যের আবেদনের বিরোধিতা করলেও দোষী সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে রাজ্যের পর এবার হাইকোর্টে যাচ্ছে সিবিআই। আগামীকালই হাইকোর্টে আবেদন দায়েরের প্রস্তুতি নেবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি এমনটাই জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল আরজি কর কাণ্ডের শুনানি। পরবর্তী শুনানি ২৯ জানুয়ারি। আগামী বুধবার দুপুর ২ টোয় শোনা হবে মামলা। জানিয়ে দিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ। শিয়ালদহ আদালতে সোমবার আরজি কর কাণ্ডে দোষী সিভিক সঞ্জয় ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার পর এই প্রথম শুনানি হওয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। তবে তা পিছিয়ে গেল এদিন।
এদিন লাঞ্চ ব্রেকের পর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সুপ্রিম কোর্ট জানায় তাদের কাছে মোট তিনটি আবেদন জমা পড়েছে। ১৬ তারিখ নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারের তরফে আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। আরও ২ টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে সিবিআই ও অন্যান্য পক্ষ রয়েছে। সব পক্ষেরই বক্তব্য শুনতে চায় শীর্ষ আদালত। আর তাই ২৯ জানুয়ারি বুধবার সব পক্ষের উপস্থিতিতে দুপুর ২টোয় শুনানির সময় বেঁধে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
গত সোমবারই আরজি করকাণ্ডে দোষীসাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। সাজা ঘোষণার দুদিনের মাথায় আজ দুপুর ২টোয় সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা ছিল।