সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে প্রয়াত বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের কন্যা আলিফা আহমেদেকে প্রার্থী করল তৃণমূল।
তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিনের কন্যা। তৃণমূলের দাবি, তিনি উচ্চশিক্ষিত। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাবার সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন বলেও দাবি তৃণমূলের।
প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত বিধায়কের মেয়েকে যে বেছে নেওয়া হতে পারে, এমন জল্পনা গত কয়েকদিন ধরেই ছিল সংশ্লিষ্ট মহলে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জায়গায় জনসংযোগমূলক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে আলিফা আহমেদকে। এর বাইরে কালীগঞ্জে তৃণমূলের যুব সভাপতি মুরশালিন শেখ, কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেফালি খাতুন, নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তারান্নুম সুলতানার নামও উঠে এসেছিল আলোচনায়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রয়াত বিধায়ক আলিফাকেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করল দলীয় নেতৃত্ব।
আলিফা আহমেদ বলেন, ‘দল দায়িত্ব দিয়েছে। এবার একেবারে বুথ স্তর থেকে সকলকে নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ব। বাবা নাসিরুদ্দিন আহমেদ মানুষের জন্য যে কাজ করে গিয়েছেন, তা সকলেই দেখেছেন। এবারের নির্বাচনে বাবার ইমেজটাই কাজে লাগবে।’
মঙ্গলবার সকালে তৃণমূলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘আলিফা এর আগে কালীগঞ্জেরই একটি আসন থেকে জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে নতুন নন। বাবার হাত ধরে তিনি স্থানীয় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। কালীগঞ্জের সমস্ত মানুষ তাঁকে চেনেন, ভালবাসেন এবং তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভোটের দিনের জন্য। গত বিধানসভা নির্বাচনে নাসিরউদ্দিন প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এ বারের উপনির্বাচনেও রেকর্ড ব্যবধানে দল জিতবে বলে প্রত্যয়ী তৃণমূল।’
কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০১১ ও ২০২১ সালে জয়ী হয়েছিলেন নাসিরউদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িতেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন কালীগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। ঘনিষ্ঠ মহলে পরিচিত ছিলেন ‘লাল’ নামে। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তাঁর মৃত্যুর পর তিন মাস বিধায়কহীন কালীগঞ্জ। নিয়ম অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হত নির্বাচন কমিশনকে। অবশেষ রবিবার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৫৩.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন আহমেদ। বিজেপির প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩০.৯১ শতাংশ ভোট। ফলে ব্যবধানটা ছিল অনেকটাই। প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। সেই ব্যবধান আরও বাড়াতে চান তাঁর মেয়ে আলিফা। এর ফলে একদিকে যেমন দলের শক্তি প্রমাণিত হবে, ঠিক তেমনই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে উজ্জীবিত হবেন দলের নেতা-কর্মীরা।
পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০১১ সালে ‘লাল’ দুর্গ কালীগঞ্জ বিধানসভা আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। ২০১৬ সালে এখানে হেরে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ সালে ফের পুরনো প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদকে লড়াইয়ের ময়দানে এনে জয়ের স্বাদ পায় তৃণমূল। এবার নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুতে অসমাপ্ত কাজের ভার তাঁরই মেয়ে আলিফার কাঁধে তুলে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
প্রসঙ্গত, ২৬ মে কালীগঞ্জ সহ দেশের পাঁচ কেন্দ্রে উপনির্বাচনের গেজেট নোটিফিকেশন জারি হয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ জুন। ৩ জুন মনোনয়ন পত্রের স্কুটিনি হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৫ জুন। ১৯ জন ভোটগ্রহণ এবং ২৩ জুন ভোটগণনা হবে। ২৫ জুনের মধ্যে গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

কালীগঞ্জ উপনির্বাচনকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি। দিন কয়েক আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘উপ নির্বাচনের নামে তৃণমূল এখানে কী করে সে তো আপনারা জানেন। তার ওপরে কালীগঞ্জে ৫৬ শতাংশ মুসলিম ভোটার। তার মধ্যেও আমাদের দলের কর্মীরা লড়াই করবেন। তবে বিধানসভা নির্বাচনের ১ বছর আগে উপ নির্বাচন করানোর দরকার ছিল না। নতুন বিধায়কের শপথ নিয়ে কাজ শুরু করতে করতে জুলাই মাস হয়ে যাবে। তবে কমিশনের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। ৬ মাসের বেশি কোনও আসন খালি রাখা যায় না।’