বিতস্তা সেন। কলকাতা সারাদিন।
ইন্দোরের দম্পতি নিখোঁজের ঘটনায় ভয়াবহ তথ্য প্রকাশ্যে এল। সোনম রঘুবংশীই (Sonam Raghuvanshi) তার সদ্য বিবাহিত স্বামী রাজা রঘুবংশীকে (Raja Raghuvanshi’s Murder) গ্রেফতার করেছে বলে খবর। রাজা রঘুবংশীকে খুনের অভিযোগে শেষ পর্যন্ত মেঘালয় পুলিশের তরফে সোনমকে (Sonam Raghuwanshi News) গ্রেফতার করা হয়।
মেঘালয়ের (Meghalaya) মুখ্যমন্ত্রী কনরাড শর্মার দাবি, সোনম রঘুবংশী আত্মসমর্পণ করেছে। গাজ়িপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মেঘলয় পুলিশের দাবি, গাজ়িপুরেই সোনম রঘুবংশী আত্মসমর্পণ করে। রাজা রঘুবংশীকে খুনের জন্য সোনম কেন লোকজন নিয়ে আসে অর্থাৎ ‘হায়ার’ করে, সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজ শুরু করেছে।
ইন্দোরের (Indore Couple) দম্পতি নিখোঁজের ঘটনায় সোনম রঘুবংশীকে যেমন গ্রেফতার করা হয়েছে, তেমনি আরও ৪ জনকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বলে জানা যায়। গত ২ জুন রাজা রঘুবংশীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মেঘালয়ের পাহাড়ের খাঁজ থেকে উদ্ধার করা হয় রাজা রঘুবংশীর দেহ। পচাগলা অবস্থায় রাজা রঘুবংশীর দেহ উদ্ধার করে মেঘালয় পুলিশ।
রাজা রঘুবংশীর দেহ উদ্ধার হলেও সোনমের খোঁজ মিলছিল না। ফলে সোনম রঘুবংশীর খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু হয়। সোনম রঘুবংশীকে এবার গ্রেফতার করা হয় স্বামীরকে খুনের অভিযোগে।
সোনমের বাবা দেবী সিংয়ের দাবি, তাঁর মেয়ে খুন করেনি। নিরপরাধ। সোনম রঘুবংশী (Meghalaya Couple) কোনওভাবে খুন করতে পারে না। এমনই দাবি করলেন সোনমের বাবা দেবী সিং। ফলে এই ঘটনায় যাতে সিবিআই তদন্ত করা হয়, সেই দাবি করেন সোনম রঘুবংশীর বাবা।
দেবী সিং আরও বলেন, রাজা রঘুবংশীর খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত করা হোক। সিবিআই (CBI) তদন্ত না করলে, সত্যি প্রকাশ্যে আসবে না বলে মন্তব্য করেন দেবী সিং। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যাতে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন, সেই দাবিও জানান সোনম রঘুবংশীর বাবা দেবী সিং। পুলিশ যে দাবি করছে, তা পুরোপুরি মিথ্যে। পুলিশের দাবির কোনও সত্যতা নেই বলে দাবি করেন দেবী সিং।
ইন্দোরের সোনম রঘুবংশী এবং তার স্বামী রাজা রঘুবংশীর শিলং সফরের সময় হোটেলের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ সামনে এসেছে। এই চার মিনিটের ভিডিওটি তদন্তে একটি নতুন মোড় এনে দিয়েছে।
এতে সোনমকে বারবার মোবাইল নিয়ে স্কুটি থেকে দূরে যেতে দেখা যাচ্ছে, যেন সে কোনো জরুরি কথা বলার চেষ্টা করছে। তার অস্থিরতা এবং বারবারকার নড়াচড়া অনেক রহস্যময় প্রশ্ন তৈরি করছে।
বারবার স্কুটি থেকে দূরে গিয়ে ফোনে কী করছিল সোনম?
ভিডিওতে দেখা গেছে যে, সোনম সাদা পোশাকে হোটেলের বাইরে রাজা রঘুবংশীর সাথে আছে। সে স্কুটির পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু হঠাৎ মোবাইল নিয়ে দু’বার দূরে যায়। মনে করা হচ্ছে, হয়তো সেখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা ছিল এবং সে কাউকে কল করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এটা কি শুধু নেটওয়ার্কের ব্যাপার ছিল নাকি অন্য কিছু?
রাজাকে ফোনে কী দেখাল? তারপর দু’জন কেন ঘুরতে বের হলো?
সোনম কিছুক্ষণ পর আবার রাজার কাছে ফেরে এবং তাকে মোবাইলে কিছু দেখায়। রাজা ফোনের স্ক্রিনটি মনোযোগ দিয়ে দেখে। এর পরে দু’জন স্কুটিতে চড়ে বেরিয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো-সোনম কি কারো কাছে সাহায্য চাইছিল নাকি এমন কিছু শেয়ার করছিল যা বিপদের ইঙ্গিত ছিল?
সিসিটিভি-তে স্কুটিতে রাখা রেইনকোট, পরে স্কুটি থেকে দূরে কীভাবে পাওয়া গেল?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন – সোনম যে রেইনকোটটি পরছিল, সেটি খুলে স্কুটিতে রেখে দেয়। কিন্তু পুলিশকে সেই রেইনকোটটি বেশ দূরে ঝোপের মধ্যে পাওয়া যায়। এখন এটি রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, স্কুটি থেকে রেইনকোট সেখানে কীভাবে পৌঁছালো? এটি কি ইচ্ছাকৃতভাবে সরানো হয়েছিল?
পুলিশ তদন্তে গাফিলতি? পরিবার গুরুতর প্রশ্ন তুলল
সোনমের পরিবারের বক্তব্য যে, শিলং পুলিশ তদন্তে ঢিলেমি করছে। অনেক সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, সোনমের খোঁজও দ্রুত হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত শুধু রেইনকোট উদ্ধার হয়েছে, মোবাইলও মেলেনি, কোনো লোকেশনের সূত্রও নেই।

এটি কি রহস্যময় অপহরণ নাকি অন্য কিছু?
সিসিটিভি ফুটেজ এই মামলাটিকে রহস্যে পরিণত করেছে। সোনমের কার্যকলাপ, তার অস্থিরতা, মোবাইলে কিছু লুকানো বা দেখানো – এই সবকিছুই সেই দিনের পরিস্থিতিকে আরও সন্দেহজনক করে তোলে। এখন সকলের নজর পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং রিপোর্টের দিকে। ফোন, রেইনকোট এবং সোনমের কার্যকলাপ – এই তিনটি মিলে একটি গভীর রহস্য প্রকাশ করছে। প্রশ্ন হলো, এটি কি একটি পরিকল্পিত অপরাধ ছিল? নাকি সোনম কোনো ভয়ে নিজে কিছু লুকাচ্ছিল? সত্য কী, তা আগামী তদন্তই বলে দেবে।