শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
অক্টোবরের ৪ ও ৫ তারিখের প্রবল বৃষ্টি ও ধসে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ এখন পুনর্গঠনের পথে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপর উদ্যোগে যুদ্ধকালীন গতিতে চলছে ভাঙা সেতু ও রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ। বিশেষ করে দুধিয়ায় বালাসন নদীর ধারে ভেঙে পড়া সেতুর বিকল্প রাস্তা তৈরির কাজ এখন প্রায় সম্পূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই দুধিয়ার রাস্তায় ফের সচল হয়েছে যান চলাচল, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ধস বিধ্বস্ত রোহিণী রোড খুলে দেওয়ার কাজও দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কালিখোলা এলাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া যোগাযোগ ব্যবস্থাও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব দপ্তর একযোগে কাজ করছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।
বন্যা ও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ত্রাণ ও পুনর্বাসনে বরাদ্দ করেছে ৩ কোটি টাকারও বেশি। মৃতদের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১.৬০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা। দুর্গতদের জন্য পাঠানো হয়েছে ৩ লক্ষ ত্রিপল ও ৪.৫ লক্ষ পোশাক। পাশাপাশি, প্রায় ১৫ হাজার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট।
এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চালু হয়েছে ৪৫টি গ্রুয়েল কিচেন, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পাচ্ছেন রান্না করা খাবার। ৩৫টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় পেয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। রাজ্য, জেলা ও ব্লক পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু রেখে নজরদারি চলছে অবিরাম।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পাশে দাঁড়াতে কৃষি দপ্তরও সক্রিয়। বাংলা শস্য বীমা যোজনার আওতায় ফসল ক্ষতির দাবি জমা দেওয়ার জন্য চলছে বিশেষ শিবির। আমার পাড়া আমার সমাধান কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষও পাচ্ছেন প্রশাসনিক সহায়তা। কৃষকদের সহায়তায় ২৯টি নতুন সুফল বাংলা আউটলেট চালু হয়েছে, যাতে কম দামে শস্য ও সবজি পৌঁছে যায় দুর্গত অঞ্চলে।
শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেও নজির গড়ছে রাজ্য সরকার। যেসব ছাত্রছাত্রীর বইপত্র ধসে বা জলে নষ্ট হয়েছে, তাঁদের হাতে নতুন বই, খাতা ও পাঠ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া নথিপত্র পুনরুদ্ধারের জন্যও চলছে বিশেষ ক্যাম্প।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণে দ্রুত গতিতে কাজ করছে জলসম্পদ, সেচ, বিদ্যুৎ, বন ও স্বাস্থ্য দপ্তর। ধুপগুড়ির কুল্লাপাড়ায় অস্থায়ী বাঁশের সেতু তৈরি করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে যাতায়াত। দুধিয়া সেতুর স্থায়ী নির্মাণকাজও জোরকদমে চলছে।

উত্তরবঙ্গের মানুষকে আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, “আমরা ছেড়ে দেব না, উত্তরবঙ্গকে আমরা আগের মতোই দাঁড় করাব।” আজ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবের মাটিতে রূপ নিচ্ছে দ্রুত।