সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। সত্য-মিথ্যার যাচাইয়ে নেমেছেন তদন্তকারীরা। তারজন্য এবার হচ্ছে একাধিক ব্যক্তির পলিগ্রাফ টেস্ট।
ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তালিকায় কে নেই! দুনিয়া প্রথম পলিগ্রাফ টেস্টের সঙ্গে পরিচিত হয় জন লারসনের হাত ধরে।ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ অফিসার তথা মনোবিদ জন লারসান ১৯২১ সালে এই নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের রক্তচাপের পরিবর্তন মাপার জন্য একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। কর্মীদের তথ্য ফাঁস রুখতে ১৯৮৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগেন পলিগ্রাফ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ভারতে কোন কোন কেসে পলিগ্রাফ টেস্ট?
ভারতে এমন কিছু সাড়া জাগানো ঘটনা আছে যেখানে পলিগ্রাফ টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সেই সমস্ত হাইপ্রোফাইল মামলায় বড় ভূমিকা রেখেছিল এই পরীক্ষা। পলিগ্রাফ পরীক্ষায় তিন তিনবার বসেছিলেন শ্রদ্ধা খুনে অভিযুক্ত আফতাব পুনওয়ালা। আরুষি তলোয়ার মামলায় নেওয়া হয় পলিগ্রাফ টেস্ট।
এখানেই শেষ নয়, হাথরস মামলায় মূল অভিযুক্তের পলীগ্রাফ টেস্ট। নিঠারি হত্যাকাণ্ডেও হয়েছিল একই পরীক্ষা।একইসঙ্গে সুনন্দা পুস্করের রহস্য মৃত্যু থেকে মালেগাঁও বিস্ফোরণ বা স্ট্যাম্প পেপার কেলেঙ্কারি, সবেতেই এই পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
কোনও ক্ষেত্রে তদন্তকারীরা হয়তো টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। কিংবা অফিসারের মনে হল অভিযুক্ত সত্যি বলছে না! তখনই করা হয় পলিগ্রাফ টেস্ট।
কী এই পলিগ্রাফ টেস্ট?
পলিগ্রাফ হচ্ছে আসলে লাই ডেটেকটর। এটি এমন একটি মেশিন যেখানে বসিয়ে কাউকে প্রশ্ন করলে তাঁর শরীর, মাথা বিভিন্নভাবে সাড়া দেয়। শরীরের ভিতরের এই স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায় একটি গ্রাফের মাধ্যমে। যে নড়চড়া দেখে বোঝা যায় জিজ্ঞাসাবাদের সামনে থাকা মানুষটি সত্যি বলছেন না মিথ্যা! তাঁর রক্তচাপ দেখে বোঝা যায় কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। এই পরীক্ষার উপর অনেকটাই ভরসা করেন তদন্তকারীরা।
ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্ট হিরণ্ময় সাহা বলছেন, মূলত তিনটি স্টেজে ভাগ করা হয় এই পরীক্ষাকে। প্রি টেস্ট, পোস্ট টেস্ট, এবং ফাইনাল টেস্ট। সেই অনুযায়ী চলে পরীক্ষা। এ রাজ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় পলিগ্রাফ টেস্টের আশ্রয় নিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাপসী মালিক মামলায় সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্তর পলিগ্রাফ টেস্ট করা হয়েছিল।
এবার তিলোত্তমা ধর্ষণ-খুনেও আবার পলিগ্রাফ পরীক্ষা হচ্ছে। চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলছেন, “যাঁদেরকে ধরা হয়েছে তাঁদের মানসিক অবস্থা বোঝাটা দরকার। তাহলে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পর্কটা পরিষ্কার হয়। সে কারণেই এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে পলিগ্রাফ টেস্টের সাফল্য নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কারণ অভিযুক্ত যদি মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হয় তাহলে পরীক্ষায় মিথ্যা ধরা পড়ে না। তাও এর হাত ধরেই জলে কতটা দুধ আছে তা ধরে ফেলতে পারে এই পরীক্ষা। এখন দেখার তিলোত্তমা কাণ্ডে কতটা সাফল্য আসে।