সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
“আমরা খোলা মন নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম। তারা ঘরের ভিতর যে কোনও বিষয় তুলতে পারতো। তারপর একসঙ্গে প্রেস কনফারেন্স করতে পারতাম। খোলা হাওয়ায়, খোলা মেলায় আলোচনা করতে পারতাম আমার ছোট ভাইবোনরা। তারা যে দু ঘণ্টা আসেনি, তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেব না। কারণ তারা ছোট ভাই বোন। আমরা সবাইকে অ্যালাউ করেছিলাম। কিন্তু তারা কেউ ঢুকলেন না। কিন্তু মিটিংয়ের পর তাদের পছন্দ না হলে তারা বাইরে বলতে পারত। আমিও ফোন নিয়ে যাইনি। ওদের যাতে অসুবিধা না হয় আমি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আর কাউকে ডাকিনি, যাতে ওদের অসুবিধা না হয়।” নবান্নে পৌঁছেও বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা না ঢোকার প্রেক্ষিতে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকেই কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তাররা। ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার থেকে দুপক্ষের মধ্যে চলেছে ইমেল চালাচালি। অবশেষে, আজ নবান্নে বৈঠকে যান জুনিয়র ডাক্তারা। নবান্নের সভাঘরে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকার পর মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর নবান্নের কনফারেন্স হল থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। প্রথমেই জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন মামলা নিয়ে বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার করা যায় না। তাই ভিডিও রেকর্ডিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও জুনিয়র ডাক্তাররা রাজি হননি। এই বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমাও চান মমতা। মমতা বলেন, “আমরা ২ ঘন্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পরও ওঁরা এল না। আমরা বলেছিলাম খোলা মনে আসুন। আপনাদের উপরে দড়ির বাঁধন নেই, ওঁদেরও নেই। পাঁচটা কথা হতে পারে। কথা বললে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। সর্বোচ্চ অথরিটি মানে চিফ মিনিস্টার বোঝায়। ওদেরকে আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। ওরা ছোট।”
কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবিতে অনড় চিকিৎসকরা। সেই প্রসঙ্গেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক লাইভ স্ট্রিমিং হয়েছিল। কিন্তু এবার এই ঘটনায় মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্ট, এবং কেসটা সিবিআই দেখছে। আমরা বলেছিলাম রেকর্ডিং হবে। তারা যদি চাইতো সেটা শেয়ার করতে পারতাম, সুপ্রিম কোর্ট চাইলেও। সুপ্রিম কোর্ট জুডিশিয়ারি। তারা লাইভ করতে পারে।” শুধু তাই নয়, মমতা বলেন, “কোর্টের যে আলোচনা আছে, তার মাধ্যই থাকতে হবে। তার বাইরে যেতে পারি না। টেলিকাস্টের ব্যাপারে আমরা ওপেন মাইন্ড। আমাকে কতগুলো ব্যাপারে মানতে হয়। গোটাটাই বিচারাধীন বিষয়। বাইরে দেখেছি, ক্রিটিসাইজ করা হয়েছে। কেউ যদি কিছু করে, তার দায় আমাদের উপর আসবে না?”
এদিন মমতা বলেন, “আমি কালও বসেছিলাম। এলেই চলে আসতাম। আমি ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার হিসেবে দেখি না এটাকে। বড়রা ছোটদের ভালবাসে। আমি জানি সিনিয়র ডাক্তার কষ্ট করে কাজ করছেন। তাঁদের অভিনন্দন রইল। বাংলরা মানুষের আবেগের কাছে বলব, আমি ক্ষমা চাইছি। আপনারাও আশায় ছিলেন আজ সমাধান হয়ে যাবে। আমি দুই ঘণ্টা বসে আছি, তিন দিন ধরে বসে আছি। যাঁদের বিরুদ্ধে ওরা অভিযোগ করছে, তাঁদের অনেকেই হয়ত একমাস আগে জয়েন করেছে। অনেককে বৈঠকেও রাখিনি। তার পরও বৈঠক ডেকে, আসবেন বলেও, নবান্নের গেট থেকে যাঁরা এলেন না, আমি ক্ষমা করে দিলাম। অনুরোধ করছি, কাজে যোগ দিন। আর্ত রোগীদের বাঁচান। আর কোনও মৃত্যু যেন না হয় বাংলায়।”
মমতা এদিন বলেন, “প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করছি আমরা। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে, আমাদের সরকারকে অসম্মান, অপমান করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসা, অপপ্রচার হয়েছে। মানুষ কলকাতায় এসেছিলেন আন্দোলনে, ওঁরা জানতেন না এর মধ্যে রং রয়েছে। আশাকরি মানুষ বুঝতে পারছেন, ওরা বিচার চায় না, ওরা চায় চেয়ার। আমি মানুষের স্বার্থে পদত্যাগ করতেও রাজি আছি। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না। আমি চাই, মানুষ বিচার পান, তিলোত্তমা বিচার পান, আর সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পান।”
এর পরও যদি জুনিয়র ডাক্তাররা আলোচনায় বসতে চান, তিনি রাজি বলে জানান মমতা। তিনি জানান, সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা এখনও আসতে পারেন, কথা বলে সমালোচনা করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কাজে না ফেরা নিয়েও ক্ষমা চান মমতা। দেশ-বিদেশ থেকে যাঁরা জুনিয়র চিকিৎসকদের সমর্থন জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছেও ক্ষমা চান মমতা। তিনি জানান, তাঁরাও সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য বিচার চাইছেন। তাই কাজে ফেরা উচিত জুনিয়র চিকিৎসকদের। শাসক হিসেবে কখনও কখনও সরকারকেও অনেক ধৈর্য ধরতে হয়, সহ্য করতে হয় বলে জানান মমতা।