প্রিয়াঙ্কা মান্না। কলকাতা সারাদিন।
প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের ইতিহাস পেরিয়ে আসা তিলোত্তমা কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দূর্গা পূজার ইতিহাস।
তার মধ্যে ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বেশ কিছু বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজো।
বিভিন্ন বনেদি বাড়ির সাবেক পুজো ছাড়া কলকাতার দুর্গাপুজোর ইতিহাস অসম্পূর্ণ। একশো, দেড়শো, দুশো, কোথাও কোথাও আড়াইশো, এমনকী তিনশো বছরের পুরনো এই সব পুজো যেন নিজেরাই বহমান ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় যা চলে আসছে আজও, প্রতি বছর।
থামে ঘেরা অট্টালিকায় বিশাল ঠাকুর দালান। তাতে একচালার দুর্গা, পরিবারের নিজস্ব আচার-রীতিনীতি মেনে জাঁকজমকের পুজো- বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর ট্রেডমার্ক। উত্তর কলকাতার বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে এমনই ছবি অধরলাল সেনের বাড়ির দেড়শো বছর পেরনো পারিবারিক দুর্গাপুজো।
সে ভাবে প্রচারের আলোয় আসেনি সেনবাড়ির পুজো। কিন্তু স্রেফ একটা ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যই এই পুজোর তাৎপর্য বোধহয় কলকাতার অন্য সব বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর চেয়ে আলাদা। অধরলাল সেনের বাড়ির পুজোয় এক বার একসঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়! এ-ও তো এক চিরস্মরণীয় ইতিহাস।
মাত্র ৩০ বছরের ছোট্ট জীবন অধরলালের। তার মধ্যেই তিনি ছিলেন অসামান্য ছাত্র, ইংরেজি সাহিত্যে পণ্ডিত, কবি, আবার ওই বয়েসেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট! তাঁর লেখা দু’টি কবিতার বই সে যুগে যথেষ্ট প্রশংসিত ছিল। অধরলালের উপরে এক দিকে ছিল ব্রাহ্ম সমাজের প্রভাব। তেমনই শ্রীরামকৃষ্ণের মহাপ্রয়াণের মাত্র তিন বছর আগে আলাপের পরে তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ শিষ্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শোনা যায়, ভক্তের বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বাড়িতে কয়েক বার এসেওছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তার মধ্যেই এক বার এসেছিলেন পারিবারিক দুর্গাপুজোয়। ঘটনাচক্রে সে দিনই প্রায় একই সময়ে ওই বনেদি বাড়ির পুজোয় আসেন আরও দুই মনীষী। স্বামী বিবেকানন্দ এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। জনে একসঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কথাবার্তা বলে কাটিয়েওছিলেন তিন জনে।
স্বামী বিবেকানন্দের গানের গলা ছিল অসামান্য। পারিবারিক ইতিহাস বলে, সে দিন সেনবাড়ির ঠাকুর দালানে বসে নয় নয় করে ২৭টি ভক্তিমূলক গান গেয়েছিলেন তিনি! আর প্রিয় নরেনের গান শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।
অধরলালের নামেই বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে সেন পরিবারের প্রাসাদোপম বাড়ির নাম ‘অধরালয়’। দেড়শো বছর পার করা দুর্গাপুজো আজও হয় সেখানেই। অন্যান্য বনেদিবাড়ির মতো ‘অধরালয়’-এর পুজোরও নিজস্ব পারিবারিক কিছু আচার রয়েছে। সেই রীতিনীতি পুঙ্খানুপুঙ্খ মেনে আজও পুজো হয়।