শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
লাশের রাজনীতি করতে গিয়ে ফের মুখ পুড়ল শুভেন্দু অধিকারীর।
ময়না তদন্তের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ!
পুলিশের হাতে এসেছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট। সেই রিপোর্টে যৌন নিগ্রহের প্রমাণ মেলেনি। আগুনে পুড়েই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে মাথার চুল, দুটো হাত ও মুখের সিংহভাগ পুড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি শরীরের নিচের অংশ অনেকটা পুড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি শরীরের সামনের বুক পুড়ে গিয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, অধিকাংশটাই ৩ ডিগ্রি ও ৪ ডিগ্রি পর্যায়ের পোড়া। তবে শরীরে কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন নেই। কেরোসিন তেল জাতীয় কিছু দিয়ে শরীরে আগুনে পুড়েছে বলে ময়না তদন্তে রিপোর্টে বলা হয়েছে। শরীরের নব্বই শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। শ্বাসনালীতে কার্বনের অস্তিত্ব মিলেছে।
কৃষ্ণনগর-কাণ্ডে তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলেই প্রথম থেকে দাবি করে আসছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ মিলল না। রিপোর্টে বলা হয়েছে, তরুণীর শরীরে ধর্ষণ বা অন্য কোনও শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন মেলেনি। শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ দগ্ধ। আগুনে পুড়ে গিয়েছিল মৃতার মুখ ও নিম্নাংশ। রিপোর্ট অনুযায়ী, তরুণীর শরীরে পুড়ে যাওয়ার যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে, তার সব ক’টিই ‘থার্ড বা ফোর্থ ডিগ্রি’র। মাথার চুল, দু’টি হাত ও মুখের সিংহভাগই পুড়ে গিয়েছে। কেরোসিন তেল জাতীয় কিছু দিয়ে গায়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। শ্বাসনালীতে কার্বনের অস্তিত্ব মিলেছে। ভিসেরা, ইউটেরাস, সার্ভিক্স, ফ্যালোপিয়ান টিউব, জরায়ু থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।
গত বুধবার কৃষ্ণনগরে পুলিশ সুপারের দফতরের অদূরে একটি পুজোমণ্ডপ থেকে উদ্ধার হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর দেহ। পরিবারের দাবি ছিল, তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। তরুণীর প্রেমিকের বিরুদ্ধেই সেই অভিযোগ তুলেছিল তারা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। ধৃত বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তবে পুলিশের তরফে জানানো হয়, তরুণী আত্মহত্যা করেছেন না কি তাঁকে ধর্ষণ করে খুনের পর জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরেই জানা যাবে।
সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তদন্তকারীদের একাংশ আপাতত আত্মহত্যার তত্ত্বেই সিলমোহর দিচ্ছেন।
সামনে CCTV ফুটেজ
কৃষ্ণনগরে কাণ্ডে নয়া মোড় মৃত্যুর ঘটনায় আরও ঘনাচ্ছে রহস্য। একাধিক বিষয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। কৃষ্ণনগরে ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় সেদিন রাতের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশে। দেখা যাচ্ছে রাত দশটা চল্লিশ নাগাদ কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক ভবনের দিক থেকে একাই হেঁটে ঘটনার স্থলের দিকে যাচ্ছে ওই ছাত্রী।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত দশটা চল্লিশ নাগাদ কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক ভবনের দিক থেকে একাই হেঁটে ঘটনার স্থলের দিকে যাচ্ছে ওই ছাত্রী।
জানা যায়, ত ১০ টা নাগাদ প্রেমিকের সঙ্গে ব্রেক আপ হয় ওই তরুণীর। তারপর মেয়েটির প্রোফাইল থেকে পোস্ট হয়, তারপরই মেয়েটি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে বলে অনুমান। ঘটনাস্থল থেকে দেশলাই বাক্স ও একটা কেরোসিনের বোতলও পাওয়া গিয়েছে। পাশের মন্ডপেই আগে যজ্ঞ হয়, সেখান থেকেই ওই ছাত্রী দেশলাই ও কেরোসিন জোগাড় করে বলে অনুমান। তবে আগে অন্য কয়েকজনের সঙ্গে তরুণীকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে সিসিটিভিতে। সম্পর্কের জটিলতা জেরে এই ঘটনা বলে অনুমান।
আবার তদন্তকারীদের অন্য একটি অংশকে এখনও কয়েকটি প্রশ্ন ভাবাচ্ছে। এক, কলেজ মাঠে অন্য এক তরুণের সঙ্গে দেখা গিয়েছে তরুণীকে। কিন্তু সেখানে তিনি কী ভাবে গিয়েছিলেন? দুই, মৃতার প্রেমিকের পরিবারের দাবি অনুযায়ী, অভিযুক্ত ঘটনার দিন কৃষ্ণনগর নয়, রানাঘাটে উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন তরুণীর ফোন থেকে একাধিক বার অভিযুক্ত যুবকের (প্রেমিক) মোবাইলে কল করা হয়েছে। সেটা কি সাধারণ কথাবার্তার জন্য, না কি দু’জনের মধ্যে কোনও গন্ডগোল হয়েছিল? তিন, মৃতা এবং ধৃত যুবকের সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় কোনও মানুষের প্রবেশ, না কি ধারের টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে দু’জনের মতানৈক্যের সূত্রপাত ঘটেছিল? চার, অভিযুক্তের দাবি, গত মঙ্গলবার, ঘটনার দিন তরুণীর সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। তদন্তকারীদের তথ্য বলছে, প্রায় একই এলাকায় দু’জনের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া গিয়েছে। তরুণী এবং তাঁর প্রেমিকের কি আদৌ দেখা হয়েছিল?