সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
কর্ম বিরতির নামে জালিয়াতি। আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে এসএসকেএম বা রাজ্যের অন্যান্য মেডিকেল কলেজে আরজিকর হাসপাতালের নির্যাতিতার বিচারের নামে কর্ম বিরতি বা চিকিৎসা ধর্মঘট ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের চোখে মহান হওয়ার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ জুনিয়র ডাক্তার রীতিমত জালিয়াতি চালিয়ে যাচ্ছেন গত আড়াই মাস ধরে।
এবারে এই সমস্ত জালিয়াত জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করল রাজ্য সরকার।
সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দরজায় প্রায় দুই মাস ধরে তালা, আন্দোলনের মধ্যে কাটল গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের যন্ত্রণার। আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন, ধর্না এবং অবস্থানের মাধ্যমে সরকারি ডাক্তাররা নিজেদের দাবি জানালেও, ৯ আগস্ট থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে ৫৬৩ জন সরকারি সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চুটিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়েছেন।
‘বর্তমান’ পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, এই ডাক্তাররা ওই সময়ে ৭৩,৯০৫টি কেস হ্যান্ডেল করেছেন, যা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় নিবন্ধিত।
এই ডাক্তারদের দ্বারা আয় হয়েছে মোট ৫৪ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। গড় হিসেব প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। তাদের মধ্যে রয়েছে সরকারি ভাতাও, যা এমডি ও এমএস পাস করার পর মাসে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে, স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় তাদের নিবন্ধিত কেসের বাইরে রোগী দেখা বা চিকিৎসার জন্য তারা আরও পারিশ্রমিক পেয়েছেন।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দেড় হাজার সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার রয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই আন্দোলনে থাকলেও তারা ভাতা বন্ধের আবেদন জানাননি। বেসরকারি ক্ষেত্রে তাদের কাজকর্মের জন্য রোগীদের চাহিদা অক্ষুণ্ণ রেখেছে। ফলে, বিভিন্ন প্রাইভেট নার্সিংহোমে চরম ভিড় লক্ষ করা গেছে। উল্টে তাদের কাজের জন্যই অনেক ডাক্তার উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন নার্সিংহোমে গিয়ে রোগী দেখা শুরু করেছেন।
এখন প্রশ্ন ওঠে, যখন সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি চলছে, তখন কেন তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্র্যাকটিস করতে বাধা অনুভব করছেন না? এই দ্বিমুখী আচরণের ফলে সমাজে প্রশ্ন উঠছে-আন্দোলনের আদর্শের বিরুদ্ধে কি তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছেন? সরকারি হাসপাতালের গরিব রোগীদের প্রতি এতটুকু দয়া নেই, অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনায় একটি বিষয় পরিষ্কার-আন্দোলন ও অর্থ উপার্জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে, যা সরকারী স্বাস্থ্য সেবার দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।