সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
পাঁচ মাসে তিনবার হামলার ছক কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে! আগেও দু’বার বিহার থেকে ভাড়া করা হয়েছিল আততায়ী। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অভিযুক্ত গুলজারের দাবি, গত জুলাই এবং অক্টোবরের পুজোর মধ্যে মারার ছক করা হয়েছিল তবে দুবার প্লান ভেস্তে যায়। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই পরিকল্পনা এমনটাই পুলিশে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গুলজার।
অন্য দিকে, সুশান্ত ঘোষের বাড়ির পাশে শান্তিপল্লী খালে ডুবুরি নামিয়ে তলাশি চালায় কলকাতা পুলিশ। ঘটনার দিন এই রাস্তা দিয়ে চম্পট দিয়েছিল দুষ্কৃতী। পুলিশ সূত্রে খবর, তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কিনা অথবা এই খালে সেটি ছুঁড়ে ফেলেছিল কিনা, তল্লাশি করে দেখা হচ্ছে। বিহার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ধৃত যুবরাজ ও তার সঙ্গীদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওখানে এদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা আছে কি না? থাকলে কোন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত জানতে চাওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আফরোজ-সহ বারোজনের সিন্ডিকেট চলত গুলশান কলোনি জুড়ে। পুকুর ভরাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল এই আফরোজ। একশো কুড়ি বিঘা ভেরি ভরাট করতে গিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সুশান্ত ঘোষ এসে সেই ভরাটের কাজ আটকেছিলেন। এর পরেই চলতি বছরের জুন মাসে ঝামেলার সূত্রপাত হয় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।
কলকাতার কসবায় কাউন্সিলারকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত গুলজারকে শনিবার দুপুরে গ্রেফতার করে পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার পুলিশ। মোটর সাইকেলে সে কলকাতা থেকে বিহারের দিকে যাচ্ছিল। গলসির উড়ো এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশ তাকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। গাড়িতে ওঠার সময় মুখ খোলে ইকবাল। ইকবাল বলে, “সুশান্ত ঘোষ গুন্ডা। আমার জায়গা দখল করেছিল সেখ হায়দার আলি। এই হায়দার আলি সুশান্ত ঘোষের সাথী। আমার ২ হাজার স্কোয়ার ফিট জায়গা দখল করে হায়দার আলি। সেজন্যই সুশান্ত ঘোষকে মারার চেষ্টা করি। সে জানায় ইকবাল আমার সাথী। আমি গুলজার”। ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা নাকি রাজনৈতিক কারণ- তৃণমূল কাউন্সিলারকে খুনের চেষ্টার কারণ কী তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। ধৃতকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বিহারের জামুইয়ের বাসিন্দা আফরোজ আগে দুবাইতে চাকরি করত। সেখানে কাজ করে জমানো টাকা দিয়ে গুলশান কলোনিতে ২০১২,১৩ সালে একটি গোডাউন কেনে। কাউন্সিলারের এক আস্থাভাজন দখল করে নেয় সেই গোডাউন। এতে হতাশা তৈরি হয় তার। এই অবস্থায় সে যোগাযোগ করে বিহারের মুঙ্গেরের কুখ্যাত দুষ্কৃতি ইকবালের সঙ্গে। ইকবাল বিহারের মুঙ্গের থেকেই অস্ত্র এবং ৪ জন ছেলেকে পাঠায় এই অপরাধ সংগঠিত করার জন্য। এর মধ্যে শুধুমাত্র যুবরাজ অ্যারেস্ট হয়েছে।
বাকি তিনজনকে খুঁজে বের করা, আরও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, এবং তদন্তের স্বার্থে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করার জন্য পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হয়। ১৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।