শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
দেখালেন তিনি দেখালেন। আরো একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার যাবতীয় বিরোধী এবং নিন্দুকদের দেখিয়ে দিলেন বাংলার মানুষের আস্থা এবং ভরসা এখনো অটুট মমতার উপরেই।
গত অগাস্ট মাস থেকে আরজিকর মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাকে সামনে রেখে যেভাবে সিপিএম বিজেপি এবং আরবান নকশালদের একটা বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করে ছুঁড়ে ফেলার জন্য সুগভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল, তা ব্যর্থ করে দিলেন মমতা।
এই ভোট তাঁদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে বিরোধী নেতারা অনেকেই কাগুজে বাঘ। ফেসবুকের ও টিভি চ্যানেলের বিপ্লবী।
তবে লাঠিচার্জ করে অথবা হাজার হাজার মানুষকে জেল বন্দি করে নয়, নিজের প্রতি গভীর আস্থা এবং তার থেকেও বাংলার মানুষের জন্য গত ১৩ বছরে যে কাজ করেছেন তার প্রেক্ষিতে বাংলার মানুষের কাছে মমতার গ্রহণযোগ্যতা কতখানি তা আরো একবার ভোট বাক্সে দেখিয়ে দিল বাংলার মানুষ।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যেমন সর্বশক্তি দিয়ে বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়েও সরকারে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বিজেপি, এবারে আর জি কর নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামার পরেও শূন্য থেকে ভোট বাক্সে খাতা খুলতে পারল না সিপিএম।
বাংলার ছয় বিধানসভা উপনির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পর্যুদস্ত হলো সিপিএম এবং বিজেপি।
তৃণমূল যে ৬টি আসনেই জিততে চলেছে, সেটা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সময় থেকেই মোটামুটি স্পষ্ট ছিল। তা আন্দাজ করার জন্য কোনও রকেট বিজ্ঞানের প্রয়োজন ছিল না। ভোটের দিন যত এগিয়েছে ক্রমশই তা আরও স্পষ্ট ও প্রকট হয়েছে। এর কারণ আগেও ব্যাখ্যা করেছি। তা হল, উপ নির্বাচন নিয়ে তখনই উন্মাদনা তৈরি হয় যখন বিরোধীরা শাসক দলকে চেপে ধরতে পারে। কিন্তু গত এক মাসে দেখা গিয়েছে, উপ নির্বাচন নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে কোনও উন্মাদনাই তৈরি করতে পারেননি বিরোধীরা। না বিজেপি তা পেরেছে, না বামেরা তা পেরেছেন। কেননা যে ৬টি আসনে উপ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে বিজেপি বা বামেদের সংগঠন বলে কোনও বস্তুই নেই। মাদারিহাট, সিতাই, মেদিনীপুর ও তালড্যাংরায় বিজেপির যাও কিছু সংগঠন রয়েছে। সিপিএমের তাও নেই। হাতেগোণা, নিষ্ঠাবান কিছু কট্টর বামপন্থী ভোট রয়েছে মাত্র। সেটুকুই পেয়েছেন বামেরা। তার বেশি একটা ভোটও হয়তো তাঁরা পাননি।
আরজি কর কাণ্ডে রাজ্যজুড়ে গণঅভ্যুত্থানের পর উপ নির্বাচনে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তৃণমূলের কাছে।
তবে এব্যাপারে মন্তব্য করতে শনিবার সকালে যথেষ্ট সাবধানী শুনিয়েছিল বারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিককে। তবে কি আরজি কর কাণ্ডের কোনও প্রভাব ভোটবাক্সে পড়েনি?
এই প্রশ্নের উত্তরে পার্থবাবু বলেন, ‘আমি একবারের জন্যও সেকথা বলব না। কারণ আরজি করের নির্যাতিতার জন্য আমরা মানসিকভাবে দুঃখিত। এই ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু সেজন্য যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন, আমরা তাদের ধিক্কার জানাই। আমারে বোনের মৃত্যুকে নিয়ে যারা রাজনীতি করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে নৈহাটির মানুষ রায় দিয়েছে।’