শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি! এভাবেই দিনের পর দিন বাড়িতে বিদ্যুৎতের চাহিদা মেটাচ্ছেন তৃণমূল বিধায়কের শাশুড়ি ও শ্যালক। ঘটনার প্রতিবাদে স্বোচ্চার বিরোধীরা।
বিদ্যুৎ চুরি রুখতে সর্বতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর। হুকিং রুখতে রাজ্য সরকার প্রচারও চালাচ্ছে।
এর মাঝেই বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ উঠল খোদ শাসক দলের বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের এমন কীর্তির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধী সিপিএম নেতৃত্ব। পাশাপাশি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়ার বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহকরাও ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের বাড়ি খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়া গ্রামের রাস্তার ধারে। সেই বাড়ি থেকে মেরেকেটে ২০০ মিটার দূরে কংক্রিটের রাস্তার ধারে তৃণমূল বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগের শ্বশুরবাড়ি। সেখানেই মাটির বাড়িতে থাকেন বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায়। এর ঠিক উল্টোদিকে দোতলা পাকা বাড়িতে থাকেন বিধায়কের শ্যালকরা। ওই জায়গার ঢালাই রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার থেকে ‘হুকিং’ করে বিধায়কের শ্যালক ও শাশুড়ির লোকজন তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।
বেশ কিছু দিন ধরে বিধায়কের শ্যালক ও শাশুড়ি হুকিং করে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিদ্যুৎ দপ্তর নিরবই থেকে গেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।এই ঘটনার সত্যতা ব্লকের শাসক দলের অন্য নেতারা স্বীকার করে নিলেও প্রকাশ্যে এ নিয়ে তাঁরা কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন।
শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিদ্যুূূৎ চুরির অভিযোগ নিয়ে বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ শনিবার জানিয়েছেন “যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে,তাহলে বিদ্যুৎ দফতর বা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এখানে আমার কিছু বলার নেই।” বিধায়কের শাশুড়ি সুমিত্রা রায় অবশ্য ‘হুকিং’ করে বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁকে প্রশ্ন করা করা হয় ,আপনাদের পাকা বাড়ি ও মাটির বাড়িতে আলাদা আলাদা ভাবে পোল থেকে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ টানা রয়েছে ,বাড়ির বাইরে মিটারও রয়েছে ,তাও বিদ্যুৎ চরিকরে ব্যবহারের কারণ কি ? এর উত্তরে সুমিত্রা রায়ের সাফাই,’১০ হাজার টাকার উপর বিদ্যুতের বিল বাকি রয়েছে। বাড়িতে শিশু রয়েছে। অন্ধকারে তারা কান্নাকাটি করে, সে জন্যেই ‘হুক’ করেছি।’
জেলা সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে রাজ্য সরকার প্রচার চালাচ্ছে। বিদ্যুৎ দপ্তর অভিযানও চালায়। অন্যরা কেউ হুকিং করে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করলে তাদের জেল-জরিমানা হচ্ছে। সেখানে বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিদ্যুৎ চুরি করে দিনের পর দিন বাড়িতে ব্যবহার করলে আঙুল তো উঠবেই।’
তৃণমূল বিধায়কের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যম নড়েচড়ে বসতেই টনক নড়ে বিদ্যুৎ বিভাগের। জানা গিয়েছে ‘হুকিং’ খুলে নেওয়ার জন্যে তারা ইতিমধ্যেই বিধায়কের শ্বশুরবাড়িতে খবর পাঠিয়েছে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) আয়েশা রানীকে ঘটনার কথা জানানো হলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ দপ্তরকে বলব এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।