সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন মামলায় মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজা শোনাল শিয়ালদা আদালত। এছাড়াও নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১৭ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত ১৮ই জানুয়ারি তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট। সোদপুরের বাসিন্দা এক তরুণী চিকিৎসক ছিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে। ওই রাতে শেষবারের মতো মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। ৯ আগস্ট সকালে হাসপাতালের সেমিনার হলে পাওয়া যায় তাঁর নিথর দেহ। অভিযোগ ওঠে, ধর্ষণের পর তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। অভিযুক্তের গ্রেফতারি রাজ্যজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মানুষের ক্ষোভ চরমে ওঠে।
এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। ১২ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সামাজিক এবং রাজনৈতিক চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। কলকাতা হাই কোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবিতে মামলা করা হয়। ১৩ আগস্ট, হাই কোর্ট এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এই ঘটনার সুবিচার চেয়ে পথে নামে সাধারণ মানুষ। ১৪ আগস্ট রাত দখলের আন্দোলনে মহিলারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন বয়সের মানুষ সেই প্রতিবাদে অংশ নেন। এর পাশাপাশি, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
তদন্ত ও আন্দোলনের জেরে চিকিৎসা মহলেও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ২ এবং ৩ সেপ্টেম্বর জুনিয়র চিকিৎসকরা লালবাজার অভিযান করেন। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান আন্দোলন শুরু হয়।
এই অবস্থার মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দাবি মেটানোর আশ্বাস দেন। এর পরেও উত্তেজনা কমেনি। তদন্ত চলাকালীন আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়।
সিবিআই তদন্তের পর, গত ৭ অক্টোবর মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়। ১১ নভেম্বর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৮ জানুয়ারি, দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেন।