সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর ইস্যুতে প্রতিবাদ চলার সময় এক তৃণমূল সাংসদের নাবালিকা কন্যা সম্পর্কে কটূক্তির করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় সিবিআই তদন্ত বাতিল করে সিট গঠনের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
অভিষেক-কন্যার মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, তা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ২ মহিলার উপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় তদন্তের জন্য সিট (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করার নির্দেশও দিল শীর্ষ আদালত। এই সিটের তদন্তের উপরে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি বহাল থাকবে। এই ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে, যাঁর অধীনস্থ এজলাসের নজরদারিতে তদন্ত চালাবে সিট।
আরজি কর কাণ্ড-পরবর্তী প্রতিবাদ চলাকালীন তৃণমূল সাংসদ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাকে উদ্দেশ করে ন্যক্কারজনক মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২ জন মহিলাকে। সেই ২ মহিলা আবার তাঁদের উপর হওয়া ‘পুলিশি নির্যাতন’-এর অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কলকাতা হাইকোর্ট সেই ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের আদেশ দিয়েছিল। সেই আদেশনামা খারিজ করেই সিট গঠনের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভুয়ানের এজলাস।
সিট গঠনে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে স্বয়ং শীর্ষ আদালতই। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি আকাশ মাঘারিয়া (আইপিএস)-এর অধীনে গঠিত হয়েছে সিট।
কলকাতা হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের আদেশের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। কেন সিবিআইকেই প্রথমে তদন্তের দায়ভার দেওয়া হল, কেন রাজ্য পুলিশের কাছে আগে দায়িত্ব গেল না – তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি কান্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘ইনস্পেক্টর এবং সাব ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আপনি কি মনে করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবেন না? দ্রুত তদন্ত শুরু হওয়া দরকার। এই ধরনের অপরাধে কোনও আইপিএস তদন্ত করতে পারবেন না বলে মনে করছেন কেন?’
তিনি আরও জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইপিএস অফিসারেরা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারবেন না, এটা প্রথমেই কেন মনে করে নেওয়া হচ্ছে? রাজ্যের অফিসারদেরও সুযোগ দেওয়া হোক। রাজ্যের পুলিশ কি এই তদন্ত করতে পারত না? সিবিআই একসঙ্গে কত তদন্ত করবে? তাদের হাতে তো আরও মামলা রয়েছে। এতে গোটা আইপিএস কুলের মনে হবে, সামান্যতম তদন্তও তারা করতে পারছেন না।’
ওই মামলায় বিচারপতি সূর্যকান্তর পর্যবেক্ষণ, সিবিআইয়ের মত দেশের প্রিমিয়ার তদন্তকারী সংস্থার উপরে অপ্রয়োজনীয় বোঝা চাপানো হচ্ছে। এই নির্দেশের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। একটা বার্তা যাচ্ছে যে রাজ্যের পুলিস আধিকারিকরা এই ধরনের তদন্ত করার ক্ষেত্রে যোগ্য নয়। তাদের মনোবল এক্ষেত্রে ধাক্কা খাবে। এক্ষেত্রে রাজ্যের পুলিস আধিকারিকদের একটি সুযোগ দেওয়া হল। অন্য রাস্তা সবসময় খোলা রয়েছে।
শীর্ষ আদালত জানায়, রাজ্য পুলিশ ব্যর্থ হলে তবেই মামলার দায়িত্ব নেবে সিবিআই।