সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
“যেখানে পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ আপনার বিরুদ্ধে। তখন কেন তাকে খাইয়ে জেলে রাখব? কেন ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে না?” ‘ধর্ষক’দের ফাঁসির শাস্তির দাবিতে সরব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “সামাজিক এই অপরাধকে সরাতে হলে একমাত্র উপায় আইন। রাজ্য সরকার বিল করেছে। কিন্তু দু’মাস ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে এর উচ্চবাচ্য নেই। ধর্ষণ ছাড়াও, অ্যাসিড আক্রান্তদের জন্যেও কড়া বিধান রাখা আছে। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে এটা করতেই পারে।”
আজ, শনিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্রে ডায়মন্ড হারবারের ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে আরজি কাণ্ডের প্রসঙ্গে তোলেন তিনি। বলেন, “আমাদের রাজ্য সরকার কোনও প্রতিবাদে বাধা দেয়নি। গুলি না চালিয়েও, বিল পাশ করিয়েছে রাজ্য সরকার। মানুষের দাবিকে মান্যতা দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে একাধিকবার কথা বলেছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছিলেন পুলিশ কমিশনারকে সরাতে। ধরে নিলাম ১৪ আগস্ট রাতে তাঁর গাফিলতি ছিল। ডাইরেক্টর হেলথকে সরাতে বললেন। কই তাতে কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল?”
চিকিত্সকদের অভিষেকের অনুরোধ, “কোথাও কিছু হলে আমাকে জানান। আমি আগেও দলগত ব্যবস্থা নিয়েছি। ভবিষ্যতেও করার চেষ্টা করব। অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে কর্মবিরতি করলেন। মনে রাখবেন আপনার প্রতিবাদের কারণে যদি কারও জীবন চলে যায়, তাহলে যে কারণে প্রতিবাদ করলেন সেটা ব্যর্থ হয়ে যায়। আপনাদের শপথের সম্মান রাখুন। কয়েকজন আছে যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জুনিয়রদের রাস্তায় নামিয়েছে। কই আপনারা বিল নিয়ে রাস্তায় নামুন দেখি, কেউ পাশে থাকুক বা না থাকুক, আমি থাকব।”
অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর। আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠেছিল রাজ্য। অভিষেক বলেন, “একটা দূর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে যে ভাবে দেখানো হয়েছিল। আর জি করের ঘটনার নিন্দা প্রথম দিন থেকে করেছি। এর প্রতিকার হল আইন। দুই তিন মাস প্রতিবাদ হয়েছে। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। আমাদের রাজ্য সরকার অপরাজিতা বিল এনেছে বিধানসভায়। আমি প্রাইভেট বিল আনব আগে বলেছিলাম। অপরাজিতা বিল রাষ্ট্রপতি ছেড়ে দিলে, দেশে এটা আইন হয়ে যাবে। না হলে আমি প্রাইভেট মেম্বার বিল আনব। সাথে কেউ থাকুক না থাকুক।”
নারী নির্যাতন নিয়ে কড়া আইন চেয়ে আগেও সওয়াল করেছিলেন অভিষেক। এদিনও সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “সামাজিক এই অপরাধকে সরাতে হলে একমাত্র উপায় আইন। রাজ্য সরকার বিল করেছে। কিন্তু দু’মাস ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে এর উচ্চবাচ্য নেই। ধর্ষণ ছাড়াও, অ্যাসিড আক্রান্তদের জন্যেও কড়া বিধান রাখা আছে। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে এটা আইনে পরিণত করতেই পারে।”
এই প্রসঙ্গে বিজেপিকে বিঁধতেও ছাড়েননি অভিষেক, “কেন্দ্রীয় সরকার আইন আনুক। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদরা ভোট দেবে। কিন্তু আপনারা আইন আনতে পারবেন না। কারণ আপনাদের দলেই ওরা বেশি করে আছে।” পাশাপাশি চিকিৎসক হেনস্থা রুখতে এদিন আমতলায় ১০ সদস্যের প্রায়োরিটি কমিটি গঠন করেন অভিষেক। একটি হেল্প লাইন নম্বরও চালু করেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক (৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭)।
শনিবার, আমতলায় সেব শ্রয় কর্মসূচির উদ্বোধন করতে এসে কর্মসমিতির নয়া কাঠামো নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক। তিনি বললেন, “দল ও নেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। আমি আমার কাজ করেছি। রেজাল্ট দেখে আমি পাঠিয়েছি। দল সিদ্ধান্ত নেবে কবে করবে। দল যাঁদের দায়িত্ব দিয়েছে, যোগ্যতা প্রমাণের দায়িত্ব তাঁদের!’ মমতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, জানালেন অভিষেক। দল শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি করেছে। দল নানা দায়িত্ব দিয়েছে নানা জনকে। সেই দায়িত্ব আগামীদিনে তাদের প্রমাণ করতে হবে। তারা কতটা পটু। আমাকে যখন যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি তা পালন করেছি। দলের সিদ্ধান্ত আমার কাছে শিরোধার্য।”
নিজের দায়িত্ব প্রসঙ্গে বলেন, “দল শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি করেছে। দল নানা দায়িত্ব দিয়েছে নানা জনকে। সেই দায়িত্ব আগামীদিনে তাদের প্রমাণ করতে হবে। তারা কতটা পটু। আমাকে যখন যা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি তা পালন করেছি। দলের সিদ্ধান্ত আমার কাছে শিরোধার্য।”
অভিষেক আশ্বস্ত করেন, মানুষের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন। উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। অভিষেকের কথায়, “বাংলাদেশ ইস্যুতে যা হচ্ছে তা রাজনীতির বিষয় নয়। বিজেপির কাজ হল সবেতে রাজনীতি করা। কেন্দ্রে তো ওদের সরকার। ওরা সেই বীরত্ব দিল্লিতে গিয়ে দেখাক। ওদের তো সংবিধান মানতে হবে। না হলে কেন্দ্র বলুক, আমরা ব্যবস্থা নেব না। তখন রাজ্য দেখবে। সীমান্ত দেখার দায়িত্ব বিএসএফের। মন্ত্রী তো কেন্দ্রের। অনুপ্রবেশ নিয়ে গল্প চলছে ১০ বছর ধরে। পাহারাদার তো অমিত শাহ। তাহলে অনুপ্রবেশ কেন হচ্ছে? সংসদে আমরা বাংলার অধিকারকে প্রাপ্য দেব। অগ্রাধিকার দেব বাংলা নিয়ে। আমাদের বঞ্চনা আছে। আমাদের গুরুত্ব সেটাই হবে।”