সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
এবারের গঙ্গাসাগর মেলা বানচাল করার চেষ্টা হতে পারে। তাই মেলার সময়ে কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে মমতা বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী সকল যানবাহনের জন্য জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়াও, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা ইসরোর সহায়তায় বাস্তবায়িত হবে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমনকি ইন্টারনেট না থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, এমনটাই জানান তিনি।
সামনেই পৌষ সংক্রান্তি। মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী সাগরদ্বীপে আসবেন পুণ্যস্নানের জন্যে। রাজ্যের সবচেয়ে বড় মেলা, গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজনে প্রশাসনিক প্রস্তুতি কেমন, কোন পর্যায়ে রয়েছে তা আলোচনার জন্যে আজ মঙ্গলবার একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৈঠকের শুরুতেই মুড়িগঙ্গার সেতুর কথা উল্লেখ করেন। চার লেনের সেতুটি তৈরি হতে বছর চারেক সময় লাগবে। তবে তার আগেই সেতুর নামকরণ করলেন মমতা। নাম রাখলেন, ‘গঙ্গাসাগর সেতু।’ মুড়িগঙ্গার উপর সেতু বানাবে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে ডিপিআর তৈরি হয়েছে। আগামী ৪ বছরের মধ্যে শেষ হবে কাজ। মঙ্গলবার একথা আরও একবার জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর ফলে মেলায় পৌঁছনো সহজ হবে। সাগর পেরিয়ে কপিল মুনি আশ্রমে পৌঁছতে হয়। যার জন্য সমস্যা পড়েন পুণ্যার্থীরা। তাঁদের কথা ভেবেই মুড়িগঙ্গার উপর সেতু বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে তার ডিপিআর হয়েছে। খরচ ১৫০০ কোটি টাকা। যা পুরোটাই দেবে রাজ্য। মমতার অভিযোগ, মেলার সমস্ত খরচ বহন করে রাজ্য। কেন্দ্রের তরফে কোনও সহায়তা মেলে না।
মেলা প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আগামী ৬ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬ ও ৭ জানুয়ারি দু’দিন গঙ্গাসাগরে থাকবেন তিনি। মেলা শুরুর আগের দিন অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি রাতেই গঙ্গাসাগর থেকে কলকাতায় ফিরবেন তিনি। উল্লেখ্য, আগামী বছর ৮ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলা চলবে।
সমস্ত কাজ কলকাতা থেকে বসে খতিয়ে দেখবেন ব্রাত্য বসু। হাওড়ার রাস্তা দেখভাল করবেন পুলক রায়। কাজে যাতে কোনোভাবেই ব্যাঘাত না ঘটে সেই দিকেও নজর রাখতে হবে। গঙ্গাসাগর মেলার সময় ওই এলাকাজুড়ে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যাবেনা বলে সাফ জানানো হয়েছে নবান্নের পক্ষ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে গঙ্গাসাগরের বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তাঁকে মেলার সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ববি, তোমায় দু-তিন দিন থাকতে হবে। পুণ্যস্নান হয়ে গেল আর চলে এলাম, তা চলবে না।’
২৫০০ সিভিল ডিফেন্স কর্মী, ৭৫টি দমকল ইঞ্জিন, ৭৫টি পুলিশের মাইক-সহ বাইক এবং ১টি হেলিকপ্টার মোতায়েন থাকবে। ১০০টি অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি অবস্থার জন্য গ্রিন করিডোরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় কোস্টাল পুলিশ, রিভার পুলিশ, নেভি ও কোস্টাল গার্ড সমন্বিতভাবে কাজ করবে।বিএসএনএলের নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ই-অনুসন্ধান এবং কিউআর কোড যুক্ত রিস্টব্যান্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ব্যান্ডের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রত্যেক তীর্থযাত্রীর ছবিসহ পরিচয়পত্র থাকবে।
মেলা প্রাঙ্গণের প্রতিটি স্টপেজে “মে আই হেল্প ইউ” ডেস্ক থাকবে।আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে মেলা এলাকা। ক্রাউড ম্যানেজমেন্টের জন্য ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে ১১৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে।