সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“আপনার টাকা, আপনার অধিকার। আমাদের প্রকল্পের জন্য টাকা লাগে না। কাউকে টাকা দেবেন না। সন্দেশখালিতে অনেক টাকার অঙ্কে খেলা হয়েছে। মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু মিথ্যা বেশিদিন চলে না। সকলে মিলেমিশে থাকবেন। দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়বেন না। মহিলাদের বলছি কেউ ডাকলে চলে যাবেন না।” সোমবার সন্দেশখালিতে দাঁড়িয়ে সন্দেশখালির উন্নয়নেও একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমি চাই সন্দেশখালির ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাক।” সন্দেশখালিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন। আমি কথা কম বলি। আমি আজেবাজে ভাষণ দিই না। কিন্তু আমি যেটুকু বলি, সেটুকু করি। আমি যেটা পারি না আমি সেটা বলি না। তার কারণ, কটূ কথা বলার, কুৎসা করার, মিথ্যে বলার অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকে আমরা শিখিনি। তাই যেন ভবিষ্যতেও না হয়।’ সন্দেশখালি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, যা হয়েছে হয়েছে আমার মনে নেই। আমি ভুলে গেছি। বিজেপির চক্রান্ত তো আপনারা জানেন। ওদের অনেক টাকা আছে। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলতেন ওরে টাকা মাটি, মাটি টাকা। এগুলো মানুষের টাকা নয়, এগুলো অন্যায়ের টাকা। বিজেপির টাকায় হাত দেবেন না।’
এই সন্দেশখালিতেই মহিলাদের রাতে পার্টি অফিসে ডেকে পিঠে বানানোর নামে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার জেরে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। মহিলারা পথে নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই সন্দেশখালি থেকেই এবার মহিলাদের সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, ‘কি মা বোনেরা পিঠেপুলি হচ্ছে? পৌষ পার্বণ হচ্ছে। দুষ্ট লোকেদের খপ্পরে পড়বেন না। মেয়েদের বলছি কেউ ডাকলে আর চলে যাবেন না। দেখলেন তো এখানে কী হয়েছিল। আমি জানি অনেক টাকার খেলা হয়েছিল। মিথ্যা বেশি দিন চলে না। একদিন না একদিন সত্যি প্রকাশ পায়।’
সন্দেশখালিতে প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা মানুষজনকে জানান। তিনি বলেন, কোনও কাজ থাকলে দুয়ারে সরকার আপনার দুয়ারে আসবে। আপনার কাজ করে দেবে। রাজ্যের যে কোনও জায়গায় কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই খবর তাঁর কাছে চলে আসে। বিজেপির অনেক টাকা রয়েছে। সেই টাকায় হাত দেবেন না। সেই টাকা অন্যায়ের টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনে ঘোষণা করেন, সন্দেশখালি গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করা হবে। জেলার মানুষকে আরও ভালো সরকারি পরিষেবা দেওয়ার জন্য উত্তর ২৪ পরগনায় নতুন মহকুমা হবে। সন্দেশখালিতে সন্দেশ হাব করার ইচ্ছার কথাও বলেন তিনি। লক্ষ্মীর ভান্ডার যারা পেয়ে থাকেন তারা ষাট বছর পার হলেও তা পেয়ে যাবেন।
মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী হয়ে বলেন, “আমি জানি হয়তো একদিন শুনব সন্দেশখালি থেকে একটা মেয়ে মাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়েছে। আমি এটা শুনতে চাই সন্দেশখালিতে একটা মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়েছে। এখান থেকে ডাক্তার হয়েছে। ডাক্তারি করে ডাক্তারিকে অপচয় করা নয়। সেবার জন্য করা। এখন থেকে মনে রাখতে হবে …কেউ হতাশ হবেন না। টাকা আসবে টাকা চলে যাবে। সম্মান চলে গেলে সব চলে যায়। টাকাও থাকে না। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। কাল যদি কেউ কোটি টাকার স্ব্প্ন দেখে আর মারা গেল হৃদরোগে তাহলে তার আর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। যদি মানুষ হতে পারেন মনুষ্যত্বের দাম সবথেকে বেশি। সন্দেশখালি জিন্দাবাদ।”
এলাকার মহিলাদের আশ্বস্ত করে বলেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মা বোনেদের বলব আগামী দিনে বিধবা এবং বার্ধক্য ভাতার জন্য দৌড়াতে হবে না। যতদিন বেঁচে থাকবেন এটা পেয়ে যাবেন।” তবে সঙ্গে দুর্নীতি রুখতেও কড়া বার্তা শোনা যায় মমতার মুখে। প্রকল্পের সুবিধা পেতে যাতে অতিরিক্ত টাকা কাউকে দিতে না হয় সে কথাও স্পষ্টভাবে বলেন। সাফ বলেন, “সরকারি প্রকল্পের জন্য কাউকে কখনও টাকা দেবেন না”। এরইমাঝে আবার সন্দেশখালির নামকরণ নিয়েও কৌতূহল প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁকে। কেন এমন নাম তা বোঝার চেষ্টা করেন। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, “সন্দেশখালির নাম সন্দেশের সঙ্গে জড়িত। এখানে কি আগে সন্দেশ পাওয়া যেত?” ঠিক তারপরই বলে ওঠেন, “সন্দেশখালিতে আরও সন্দেশের দোকান হবে”।
পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে সন্দেশখালির সভা থেকে মমতা বলেন, “নরকঙ্কালের দল, পাষন্ডের দল, বিসর্জনের দল, মানুষকে মেরে ফেলার দল আর দৃশ্য দূষণের দল। মনে রাখবেন এদের মিথ্যে কথায় ভুলবেন না। এভাবেই সিপিএমকে একহাত নিলেন মমতা। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, মনে রাখবেন দিদি যদি বলে দিদি করবে। মনে রাখবেন সন্দেশখালিতে ঘটনা ঘটলে আমার কানে আসবে ১ সেকেন্ডের মধ্যে, হিঙ্গলগঞ্জে একটা ঘটনা হলে আমার কানে আসবে এক সেকেন্ডের মধ্যে মিনাখাঁয় একটা ঘটনা হলে আমার কানে আসবে ১ সেকেন্ডের মধ্যে। বাদুরিয়ায় ঘটনা হলে আমার কানে আসবে ২ সেকেন্ডের মধ্যে। বসিরহাটে ঘটনা হলে আমার কানে আসবে আধ সেকেন্ডের মধ্যে। আমি সকাল থেকে রাত মানুষের পাহারাদারির কাজ করি। আপনারা ভালো থাকলে, আপনারা সুস্থ থাকলে আমি ভালো থাকি, সুস্থ থাকি।”