বিতস্তা সেন। কলকাতা সারাদিন।
আজ নদীয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোট গণনা। এবার কালীগঞ্জ উপনির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা রয়েছে। এলাকায় দু’ বারের জনপ্রিয় বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ প্রয়াত হওয়ায় এই উপনির্বাচন। সেক্ষেত্রে প্রবল আবেগ সহানুভূতি রয়েছে। একইসঙ্গে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্বও রয়েছে। যা প্রচারের প্রথমদিকে তৃণমূলের দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতিতেই এক প্রকার স্পষ্ট হয়েছে।
২০২১ সালে ৮৪.৩০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০২৪ সালেও ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র সহ দেশের ৪ রাজ্যের ৫ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই উপনির্বাচন হয়েছে। তাই রাজ্যের একমাত্র ১ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এই উপনির্বাচন হওয়ার অশান্তি রুখতে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে কমিশন। এরপরও প্রবল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভোটাররা কোথা থেকে এল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তাঁর বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বললেন, ‘এত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার পরও ছাপ্পার অভিযোগ তোলা হচ্ছে! এসব যুক্তি খাটে না। বিজেপি ব্যাপক ভোটে হারবে মানুষ জেনে গিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। তাই মানুষ ভোট দিয়েছে।’ ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার এই ভোটের গণনা আছে। তার আগে এই কেন্দ্রে থেকে কে জয়লাভ করবে, কত ভোটের মর্জিনে জয়লাভ করবে এই মুহূর্তে এটাই চর্চার বিষয়। ৫৮ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ৫৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ২০২১ সালে নাসিরুদ্দিন আহমেদ প্রায় ৪৭ হাজার ভোটে জয়লাভ করে। বিজেপি প্রায় ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এই উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আলিফা আহমেদ এই কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। তবে তিনি কি পারবেন তাঁর প্রয়াত বাবা নাসিরুদ্দিন আহমেদের জয়ের মার্জিনকে পেরিয়ে যেতে? এটাই জেলায় রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয়।
২০২১ সালে ৮৪.৩০ শতাংশ ভোট পোল হয়েছিল। এভাবেই কালীগঞ্জ বিধানসভায় ২০২১ সালে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৬৯০ ভোট পোল হয়েছিল। ২০২৫ সালে কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে ১৩ টি পঞ্চায়েতে কম ভোট পোল হয়েছে। মোট ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ভোট পোল হয়েছে। এই উপনির্বাচনে ৭৩ শতাংশ ভোট পোল হয়েছে। এমনকি তৃণমূলে সাবোতাজের আশঙ্কাও আছে। জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে বড় চাঁদঘর পঞ্চায়েতে ২২ হাজার ১২ টি ভোট পোল হয়েছিল। এবার সেখানে ২০ হাজার ৭৭০ টি ভোট পোল হয়েছে। এই পঞ্চায়েতে ১০ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। ২০২১ সালে গোবরা পঞ্চায়েতে ১৬ হাজার ২৭৭ টি ভোট পোল হয়েছিল। এবার সেখানে ১৪ হাজার ৮০১ টি ভোট পোল হয়েছে।
এখানেও ৯ শতাংশের বেশি ভোট কম পোল হয়েছে। মীরা -১ পঞ্চায়েতে ১৩ হাজার ৩৭০ টি ভোট পোল হয়েছিল। এবার সেখানে ১১ হাজার ৫১৮ টি ভোট পোল হয়েছে। এখানেও ১২ শতাংশের বেশি ভোট কম পোল হয়েছে। পলাশী-২ পঞ্চায়েতে ৯ হাজার ১৯৯ টি ভোট পোল হয়েছিল। এবার সেখানে ৮ হাজার ১৬৪ টি ভোট পোল হয়েছে। এখানেও ১০ শতাংশের বেশি ভোট কম পোল হয়েছে। হিন্দু ও মুসলিম প্রাধান্য থাকা ১৩ টি পঞ্চায়েতে ভোট পারসেন্টেজ কমেছে। তার সুবিধা কোন দল পাবে এটাই প্রশ্ন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ। হাসপাতালে ভর্তি করেও শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তারপর থেকেই এই আসন ছিল বিধায়কহীন। অবশেষে গত শনিবার হয়ে গেল ভোট। কালীগঞ্জেই এবার তৃণমূলের টিকিটে লড়েছেন নাসিরুদ্দিনেরই কন্যা আলিফা আহমেদ। অন্যদিকে বিজেপির টিকিটে লড়েছেন আশিস ঘোষ। সারাদিনব্যাপী ভোট পড়েছিল প্রায় ৬৯ শতাংশ। রাত পোহালেই এই আসনের ফলাফল সামনে আসতে চলেছে।পানিঘাটা হাইস্কুলের গণনাকেন্দ্রে সকাল ৮ টা গণনা শুরু হবে। প্রথমে পোস্টাল ব্যালট। তারপরে ইভিএম-এর ভোটগণনা হবে। গণনার জন্য দুটি হল ঘর থাকছে। সেখানে থাকবে আটটি করে মোট ১৬টি টেবিল। সাড়ে ১২ টার মধ্যে ফল ঘোষণা-সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হবে। আশাবাদী রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও তাঁর দফতর। এখনও পর্যন্ত যা খবর তা জানা যাচ্ছে মোট ২০ রাউন্ড গণনা হবে। মোট বুথ ৩০৯।
ইতিমধ্যেই ভোটের পর থেকেই স্ট্রং-রুম পাহারায় রয়েছে এক প্ল্যাটুন অর্থাৎ চব্বিশ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। তিনটি শিফটে চলছে তাঁদের ডিউটি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যদি কোনও রাজনৈতিক দল স্ট্রং রুম পর্যবেক্ষণ করতে চায়, তবে রিটার্নিং অফিসারের থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি সাপেক্ষে ২৪ ঘন্টাই স্ট্রংরুমের ১০০ মিটারের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে থাকার সুযোগ আছে। পর্যবেক্ষণও করতে পারবেন। গণনাকে কেন্দ্রে থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢোকার মুখে অর্থাৎ গণনা কেন্দ্রের বাইরে (রাস্তায়) থাকবে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী।
থাকছে লাঠিধারী পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। দ্বিতীয় স্তরে থাকছে রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। তৃতীয় স্তরে কেবলমাত্র থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
রাজনৈতিক দলগুলির যে সমস্ত এজেন্ট গণনা কেন্দ্রে ঢুকতে চাইবেন তাঁরা সঙ্গে শুধুমাত্র সাদা কাগজ ও কলম নিতে পারবেন। গণনা কেন্দ্রে ক্যামেরা বা মোবাইল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র সাধারণ পর্যবেক্ষক এবং রিটার্নিং অফিসার মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন।