শৌনক মন্ডল। কলকাতা সারাদিন। আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫ (Nobel Peace Prize 2025) ঘিরে চলছিল প্রবল জল্পনা। বিশ্বজুড়ে গুঞ্জন— মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই এবার পেতে চলেছেন নোবেল শান্তির মুকুট। তিনি নিজেও আশাবাদী ছিলেন, সামাজিক মাধ্যমে শুরু করেছিলেন প্রচার। কিন্তু শুক্রবার নোবেল কমিটি যখন ঘোষণা করল, ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাডো (Maria Corina Machado)-র নাম, তখন যেন ট্রাম্পের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেসে গেল এক ঝটকায়।
ট্রাম্পের ক্ষোভে ফুঁসছে হোয়াইট হাউস
পুরস্কার ঘোষণার পরই হোয়াইট হাউসে শুরু হয় রোষের আগুন। কমিটির সিদ্ধান্তে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং (Steven Cheung) বলেন— “President Trump will continue to make peace deals and save lives. The Nobel Committee clearly values politics over peace.”
অর্থাৎ, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ ও শান্তির বার্তা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু নোবেল কমিটি শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।”
এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই আমেরিকান সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে এই প্রতিক্রিয়ায়।
‘বারাক ওবামা কিছু না করেই নোবেল পেয়েছিলেন’ — ট্রাম্পের বিস্ফোরক মন্তব্য
পুরস্কার ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই নিজের বক্তব্যে ট্রাম্প আক্রমণ করেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (Barack Obama)-কে। বলেন,
“Obama got the Nobel Prize for doing nothing. He destroyed America.”
অর্থাৎ, “ওবামা কিছু না করেই পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি আমেরিকাকে নষ্ট করেছিলেন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্যই তাঁর নোবেল পাওয়ার আশা ভেঙে দেওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
ভেনেজুয়েলার ‘আয়রন লেডি’ মারিয়া কোরিনা মাচাডোর জয়
যাঁর কাছে হার মানল ট্রাম্পের আশা, তিনি হলেন মারিয়া কোরিনা মাচাডো (Maria Corina Machado) — ভেনেজুয়েলার প্রধান বিরোধী নেত্রী, যিনি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে দেশজুড়ে পরিচিত ‘Venezuela’s Iron Lady’ নামে।
গত কয়েক বছর ধরে নিকোলাস মাদুরোর স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে নির্ভীক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মারিয়া। ২০২5 সালে Time Magazine-এর ‘Top 100 Most Influential People’-এর তালিকায়ও তাঁর নাম উঠে আসে। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন, কারণ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে জারি হয়েছে একাধিক মামলা।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে— “Maria Corina Machado embodies courage, democracy, and the true spirit of peace that Alfred Nobel envisioned.”
অর্থাৎ, “মারিয়া কোরিনা মাচাডো সাহস, গণতন্ত্র ও শান্তির যে ভাবনা আলফ্রেড নোবেল কল্পনা করেছিলেন, তারই প্রতীক।”
নোবেল কমিটির কটাক্ষে ট্রাম্পের নাম না করেও ‘ইঙ্গিত স্পষ্ট’
নোবেল কমিটির প্রধান ইয়োর্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস (Jorgen Watne Fridnes) বলেন—
“When we decide, we follow Alfred Nobel’s will — it’s not about power, it’s about peace.”
ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও, তাঁর power politics-এর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। অর্থাৎ, নোবেল কমিটি পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিল— শান্তি নয়, ট্রাম্পের অগ্রাধিকার রাজনীতি ও প্রচার।
পাকিস্তানের প্রস্তাব, ভারতের আপত্তি — তবুও ট্রাম্পের ব্যর্থতা
উল্লেখযোগ্য, চলতি বছরের জুন মাসে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল কমিটির কাছে ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেছিল Nobel Peace Prize 2025-এর জন্য। কারণ, ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে তিনি Israel–Hamas peace talks এবং Ukraine ceasefire initiative-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়ে দেয়— ট্রাম্পের তথাকথিত মধ্যস্থতা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ব্যক্তিগতভাবে ফোনে ট্রাম্পকে জানান, “India does not need any external interference.”
এই ঘটনাই অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
ট্রাম্পের স্বপ্ন ভেঙে গেল, কিন্তু যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মাচাডো
মারিয়া কোরিনা মাচাডো এখনও আত্মগোপনে থেকে দেশজুড়ে শান্তি ও গণতন্ত্রের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেছেন “She has no army, no money, but she has the people.”
অর্থাৎ, “তাঁর কাছে সেনা নেই, টাকা নেই, কিন্তু আছে মানুষের ভালোবাসা।”
নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তের পর বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রপন্থী নেতারা তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বিরোধী নেতা তাঁর সাহস ও ত্যাগের প্রশংসা করেছেন।

মার্কিন মিডিয়ার কটাক্ষ: “Trump loses to a hidden hero”
CNN, The Washington Post, এবং BBC— তিন সংস্থাই একই শিরোনাম ব্যবহার করেছে: “Trump loses to a hidden hero.”
বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে ট্রাম্পের এই পরাজয়কে অনেকেই বলছেন ‘symbolic defeat’। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও নোবেল স্বপ্নের পতন ঘটল এক গণতন্ত্রকামী মহিলার জয়ে।

Winner: Maria Corina Machado (Venezuela’s Iron Lady)
Focus: Democracy, Peace, Human Rights
Donald Trump Reaction: Furious, accused Nobel Committee of bias
Nobel Committee’s Message: Peace over politics