শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে এবারে দুর্গাপুরেও চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ। ধর্ষণ নয়, অভিযোগ গণধর্ষণের। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বিরোধী শিবির। আসরে নেমেছে বিজেপি। পিছিয়ে নেই বামেরাও। পাশাপাশি আর জি করের অভিজ্ঞতা থেকে এবারে তড়িঘড়ি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে আসরে নেমে পড়ল স্বাস্থ্য দপ্তর।
ওড়িশা থেকে দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে এসে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ কেন্দ্র করে ফের তোলপাড় রাজ্য। তার প্রেক্ষিতেই দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। এ খবর জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব।
এদিকে এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজেপি, সিপিএম। এদিকে এর আগে আরজি করের ঘটনার সময় সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা পেশ করে রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা যাতে জোরদার থাকে সে বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ করতে হয়েছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে। জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কাছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলির বিষয়ে বিশদে জানতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। সেই মর্মেই রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।
নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন খোদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। খোঁজ নেন এফআইআর দায়ের হয়েছে কিনা। কাঁদো কাঁদো গলায় নির্যাতিতার বাবা তাঁকে জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, তরুণীর সঙ্গে গত সন্ধ্যায় যে সহপাঠী ছিলেন তাঁকে আটক রাখা হয়েছে। ফোনালাপে নির্যাতিতার বাবাকে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য কিছু প্রয়োজন পড়লে আমাকে জানাবেন। আপনি যদি ওখানে চিকিৎসায় সন্তুষ্ট না হন, অবশ্যই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কলকাতার কোনও একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেব।’
সুর চড়িয়েছে বামেরাও। এদিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের দলের লোকেরা গিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনও ভাবে গোটা ঘটনাকে ধামাচাপা না দেওয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে চাকরির টোপ, ঘর দিয়ে গোটা ব্যাপারটাকে দফারফা করে দেওয়া হয়। আমরা মনে করি, পুলিশের এই নিয়ে যথার্থ তদন্ত করা উচিত।’একই সুর সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরও। এদিন তিনি বললেন, ‘গোটা দুর্গাপুর এবং আসানসোলে এখন সমাজবিরোধীদের দাপাদাপি। কারখানা বন্ধ হয়েছে, মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। পুলিশ-প্রশাসন ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করে দিয়েছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, নিরাপত্তায় কতটা ফাঁক রয়েছে।’
তবে এই নিয়ে আপাতত কোনও মন্তব্য করতে নারাজ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘কারা করল, চেনা-পরিচিত কেউ কিনা, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। গোটা ঘটনাটাই অনভিপ্রেত। কী হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, তা না জেনে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। শুধু বিজেপি-সিপিএম-কে বলব, আপনারা মাথা ঘামাবেন না।’

আবার রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘নির্যাতিতার সহপাঠী তাঁকে ওই অবস্থায় ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই সুযোগ নিয়ে এই নোংরামি হয়েছে। সেই বন্ধুকেও তলব করেছে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন ওত রাতে ওরা ওখানে গিয়েছিলেন। আর যারাই এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককেই গরাদের পিছনে পাঠানো হবে। এটা তো বিজেপি শাসিত রাজ্য নয় যে ধর্ষকদের জেল থেকে বের করে মাল্যদান করা হবে। এ রাজ্যের বুকে ধর্ষকের জায়গা জেলের পিছনে।’