সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে রাজ্যকেও। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররাও অনড়। জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি আছে। তা মানা হলে তারপরই তাঁরা ভেবে দেখবেন, কর্মবিরতি তুলবেন কি না।
আজ তাঁরা স্বাস্থ্যভবন অভিযানে যাবেন। দুপুর ১২টায় করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্যভবনে যাবেন তাঁরা।
সোমবার RG কর মামলার (RG kar doctor death case) দ্বিতীয় শুনানিতে রাজ্য সরকারকে একাধিক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করলেও মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের ফের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এই নির্দেশে হতাশা প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা।
সুপ্রিম-আর্জি, কাজে ফেরার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন, মুখ্যসচিবের আবেদনের পর সোমবার জিবি মিটিং করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপরই ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পাঁচ দফা দাবির কথা তুলে ধরা হয়। ১. দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ২. সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড, ৩. সিপি বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ, ৪. স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা, ৫. ‘থ্রেট কালচার’-বন্ধ করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো বলেন, “আমাদের দাবি যে ন্যায়সঙ্গত নয় তা তো সুপ্রিম কোর্ট কখনও বলেনি। তাহলে ন্যায্য দাবিকে সামনে রেখে যদি কোনও আন্দোলন হয়ে থাকে, সেই ন্যায়সঙ্গত দাবি মেটানোর দায়িত্ব একটা সরকারের। রাজ্য সরকার যদি মনে করে আমরা কাজে যোগ দিই, তাহলে এই দাবি মেনে নিতে সমস্যা কোথায়?”
এই বিষয়ে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসদের পাশে থাকারও বার্তা দিল তারা। কর্মবিরতির জন্য রাজ্যে যে সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গের সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বাল যে দাবি জানিয়েছেন তা সত্যি নয় বলে দাবি করা হয় তাদের তরফে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে RG কর শুনানি শুরু হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বাল জানান, পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চিকিৎসকদের আইনজীবীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখনও জুনিয়র চিকিৎসকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
শুনানির পর রাজ্যের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বারবার দাবি করেন, একটি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শুধু জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে আরও চিকিৎসক নিয়োগ করা প্রশাসনের দায়িত্ব। এছাড়াও তাঁরা বারবার উল্লেখ করেন, রাজ্যজুড়ে একাধিক জায়গায় অভয়া ক্লিনিক খুলে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। আর সমস্ত সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র চিকিৎসকরা ডিউটি করছেন।
তারপরও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার মধ্যে তাঁরা কাজে না ফিরলে রাজ্য সরকার যা পদক্ষেপ নেবে তাতে পূর্ণ সমর্থন থাকবে আদালতের। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশই হতাশ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা ও আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক এবং রাজ্যের অসংখ্য সাধারণ মানুষকে।
আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’ বা ‘অভয়া’কে ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ন্যায় বিচারের দাবিতে প্রায় একমাস ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । ন্যায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলেও তারা জানিয়ে দিয়েছেন ।
পাশাপাশি সিনিয়র চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন যে সরকার যদি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয় তাহলে তারা গন ইস্তফার পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন । এদিকে এই মামলায় আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি ছিল । সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনকারী চিকিৎসকের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে । সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা । কিন্তু ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন(আই এম এ) এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া ও সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে আন্দোলন যেমন চলছে তেমনই চলবে । ফলে চিকিৎসক ও সর্বোচ্চ আদালতের এই সংঘাত কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ ।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার পরে একটা প্রেস রিলিজে আইএমএ বলেছে,’আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম আজ ৯ই আগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজে একজন কর্তব্যরত ডাক্তারের নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির জন্য। অপরাধের নৃশংসতার কথা মাথায় রেখে আমরা ইতিবাচক ফলাফল আশা করছিলাম। যাইহোক, আদালত এবং সিবিআই-এর কার্যক্রমে আমরা সম্পূর্ণভাবে হতাশ। আমাদের সহকর্মীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য দ্রুত বিচারের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা জানতে পেরে আরও বেশি হতাশ হয়েছিলাম যে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট এই বিক্ষোভের অগ্রদূত জুনিয়র ডাক্তারদের নির্দেশ দিয়েছে যে তাদের আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে ফিরতে হবে । হাসপাতালগুলিতে অল্প কিছু মৃত্যুর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের যেভাবে দায়ী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কারণে কোনও হাসপাতালে পরিষেবা যে সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে লক্ষ্য করাও খুব মর্মান্তিক ছিল।
আমরা সবাই জানি যে আমাদের জুনিয়রদের সহকর্মীরা অভয়ার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধের জন্য দ্রুত এবং ন্যায্য বিচারের জন্য প্রতিবাদ করছে এবং স্বাস্থ্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের অপরাধ ও দুর্নীতি না হয়। তবে আমরা দুঃখের সাথে বলতে চাই যে সিবিআই দ্রুত বিচারের দিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখায়নি বা রাজ্য সরকার এই স্বাস্থ্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে IMA তাদের ভবিষ্যতের সমস্ত আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের নিঃশর্তভাবে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। IMA সমগ্র চিকিৎসক সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতি দেয় যে প্রতিবাদটি শেষ হবে না। আগামী দিনে, এটি আরও শক্তিশালী হবে এবং ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোনও কসুর করন না। অ্যাকশন কমিটি আইএমএ বেঙ্গল স্টেট ।