সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
কলকাতা দূরদর্শনের মহালয়া… নামটা শুনলেই চোখের সামনে নিমেষে ভেসে ওঠে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দশভূজা চোখ ধাঁধানো এক মূর্তি… কানে যেন এখনো বাজে সেইসব মহালয়ার অনুষ্ঠানের পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ইন্দ্রানী সেন, হৈমন্তী শুক্লর গান… প্রতিটি রোমকূপে আজও যেন শিহরণ জাগায় অজয় ভট্টাচার্যের উদাত্ত কণ্ঠের স্তোত্রপাঠ– “নমস্তে জগত্তারিণী ত্রাহি দুর্গে” …
কিন্তু সেসব আজ অতীত। মহালয়ার প্রভাতি অনুষ্ঠান আজ আর কলকাতা দূরদর্শনের মতো “cultural event” নেই, তা পরিণত হয়েছে আজ চ্যানেলে চ্যানেলে TRP-র লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার “commercial event”-এ। মহালয়ার ভোরে আজ তাই দুর্গা বনাম মহিষাসুরের লড়াই নয়, শুভ-অশুভের লড়াই নয়, চ্যানেলের সাথে চ্যানেলের trp-র যুদ্ধের রণশঙ্খ শ্রুত হয়। কিন্তু যে চ্যানেল বাঙালিকে মহালয়া চেনালো, বোঝাল মহালয়ার ভোরে প্রভাতি অনুষ্ঠান বলে কিছু একটা হতে পারে, নৃত্যশিল্পী থেকে অভিনেত্রীদের দুর্গার সাজে সাজিয়ে যে কোন নৃত্য প্রযোজনা হতে পারে দিল তার ধারণা, না কোন TRPর লড়াইয়ে জয়ী হতে নয়, বাঙালির সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে; ঠিক কি হল সেই চ্যানেলের???
বিগত ২০১৪ সাল থেকে সেই ডিডি বাংলা ক্রমাগত একই মহালয়ার অনুষ্ঠান প্রতিবছর নিয়ম করে সম্প্রচার করে চলেছে। দুঃখের বিষয় এটাই যে অনুষ্ঠানটি তাঁরা ২০১৪সাল থেকে সম্প্রচার করে চলেছে সেটির গুণগতমান তাঁদের চ্যানেলের অন্য যে কোন মহালয়ার থেকেই পাল্লায় কম পড়ে। অনুষ্ঠানটিতে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মালোবিকা সেন দুর্গা রূপে থাকলেও তাঁকে দেখা যায় কেবলমাত্র একটি কি দুটি গানে । এমনকি তাঁর হাতে মহিষাসুরবধ কিম্বা যুদ্ধটুকুও নেই। যাঁদের চ্যানেলে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ইন্দ্রানী হালদারের মত স্বনামধন্য দুর্গাদের মহালয়া রয়েছে, তাঁরা কিনা এই একটি মহালয়া ক্রমাগত সম্প্রচার করে চলেছে। এমনকি এই কলকাতা দূরদর্শনই বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী , কিংবদন্তী দুর্গা চরিত্রাভিনেত্রী হেমা মালিনীকে কলকাতায় এনে বাংলা মহালয়ার অনুষ্ঠানে দুর্গা সাজায়।
দুই দশক পার হয়েও বাংলার হাই বাজেট চ্যানেল গুলি আজও পর্যন্ত এরকম কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি,সেই ডিডি বাংলায় আজ ক্রমাগত এই একই মহালয়ার সম্প্রচার। বেতারের “মহিষাসুরমর্দ্দিনী” না শুনলে যেমন বাঙালির পুজো শুরু হয়না, তেমনি অনেক মহালয়াপ্রেমী আছেন, যাঁদের ডিডি বাংলার মহালয়া ছাড়া মহালয়া হয় না। আজও মানুষ বানিজ্যিক চ্যানেলে trpর লড়াই দেখতে ক্লান্ত হয়ে , বিরক্ত হয়ে চোখের আরাম, প্রানের আরাম খোঁজে ডিডি বাংলার পর্দায়। মহালয়ার ভোরে প্রত্যেকেই একবার চ্যানেল ঘুরিয়ে দেখতে চান, সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন মহালয়া সম্প্রচারিত হচ্ছে কিনা।
তাই কলকাতা দূরদর্শনের কাছে আমাদের অসংখ্য মানুষের হয়ে বিনীত অনুরোধ, তাঁরা যেন এই মালোবিকা সেন অভিনীত “মহিষাসুরমর্দ্দিনী” শীর্ষক মহালয়ার অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের পরিবর্তে তাঁদের অন্য অন্য পুরোনো সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমামালিনী, ইন্দ্রানী হালদার প্রমুখের অভিনীত মহালয়ায় অনুষ্ঠানগুলি পুনরায় সম্প্রচার করার বিষয়ে বিবেচনা করে দেখেন। মহালয়ার ইতিহাস, দর্শকের-শ্রোতার চাহিদার ইতিহাস। ১৯৭৬ এ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের “মহিষাসুরমর্দ্দিনী”র পরিবর্তে উত্তম কুমারের “দেবীং দুর্গতিহারিণীম” সম্প্রচারে ক্ষুব্ধ বাঙালির দাবীতে পুনরায় “মহিষাসুরমর্দ্দিনী” সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন বেতার কর্তৃপক্ষ।