সুষমা পাল মন্ডল। কলকাতা সারাদিন।
মানবসভ্যতার বিকাশকাল হতে পোড়ামাটির ভাস্কর্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতায় এই শিল্পের প্রচলন ছিল।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য-এর বহু টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
Bankura Terracotta-র শিল্প বিশ্ব প্রসিদ্ধ!
অথচ প্লাস্টিক এবং ফাইবারের মতো আধুনিক জিনিসপত্রের সাহায্যে প্রতিমা বা পুতুল বানানোর প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে যেন হারিয়ে যাচ্ছে মাটির বা পোড়ামাটির বা পাথরের উপরে শিল্পী স্থপতিদের সেই অসাধারণ শিল্পের নিদর্শন।
তবে শুধুমাত্র পোড়ামাটির কাজ নয়, বাংলার পশ্চিমাঞ্চল বলে পরিচিত পুরুলিয়ার ছৌ নাচ ইউনেস্কো হেরিটেজের স্বীকৃতি পেলেও ক্রমশ বিলুপ্ত প্রায়।
পুরুলিয়া জেলার অন্যতম লোকশিল্প ছৌ নাচ (Chhau Dance)। বিশেষ ধরনের পোশাক, মুখোশ ও নৃত্যশৈলীর জন্য শুধু মাত্র বাংলাতেই নয়, গোটা দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে এই লোকনৃত্যের সুনাম। জেলার বহু মানুষের জীবিকা জড়িয়ে এই লোকনৃত্যের সঙ্গে। কিন্তু সেই ছৌ শিল্পীরা কেমন আছেন এখন? সেই শিল্পেরই বা কেমন অবস্থা?
খোঁজ রাখে না প্রায় কেউ।
তবে এসবের মাঝেও দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে বাংলার এই দুই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে আরও একবার তুলে ধরার জন্য এগিয়ে এলো বাঁকুড়ার রাঙ্গামাটি মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ।
এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী রিন্টু মন্ডল এবং ডাক্তার বিশ্বজিৎ মন্ডলের উদ্যোগে জেলার বিলুপ্ত প্রায় শিল্পকে বিশ্বের দরবারে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরার জন্য এবারের দূর্গা পূজার মন্ডপ থেকে শুরু করে প্রতিমা সবকিছুই তৈরি হয়েছে বাঁকুড়ার বিশ্ব বিখ্যাত পোড়ামাটির শিল্পে।
শুধুমাত্র পোড়ামাটির শিল্প বা ছৌ নাচকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য নয়, বর্তমানে শুধুমাত্র কলকাতার ফিল্ম শিল্পী বা সিনেমার সেট ডিজাইনাররা যেখানে দুর্গা পূজার মন্ডপ তৈরি করছে সেখানে গ্রামের যে সমস্ত শিল্পীরা নিজেদের হাতের কাজের জন্য বিখ্যাত, রুটি রুজি হারাচ্ছেন তারা।
একদিকে বন্যা বিধ্বস্ত জেলায় যখন চাষবাসের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় সেই সময় জেলার শিল্পীদের রোজগারের ব্যবস্থাও এভাবেই করার চেষ্টা করেছেন তরুণ পূজো উদ্যোক্তা ডাক্তার বিশ্বজিৎ মন্ডল।