কনিষ্ক সামন্ত। কলকাতা সারাদিন।
শুভেন্দু হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়! অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারী প্রচারে এলেই সেখানে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত। এতদিন তৃণমূল নেতারা যে কথা বলতেন এবারে সেই একই স্লোগান উঠে এসেছে প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের শাসক দল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা নেতাদের মুখেও।
বাংলার একমাত্র বিজেপি নেতা হিসেবে বিজেপির ষ্টার ক্যাম্পেইনার বা তারকা প্রচারকের তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
মূলত বাংলা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দুর উপরে।
বাংলার একেবারে লাঘুয়া ঝাড়খণ্ডের জামতারা এবং নালা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। নালা বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন ১০৪৮৩ ভোটের ব্যবধানে। অন্যদিকে জামতারা বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়ের মার্জিন পৌঁছে গিয়েছে 43 হাজার 676 ভোটে। এছাড়াও বাকি যে কেন্দ্রগুলিতে শুভেন্দু একবারের জন্যেও গিয়েছেন সেখানে নিশ্চিত ভাবে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
বাংলা হোক, অথবা ঝাড়খন্ড – শুভেন্দু অধিকারী যেখানেই প্রচারে গিয়েছেন তার প্রত্যেকটিতে তার নির্বাচনী বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্প্রদায়িক ঘৃণাভাসন যেভাবে উঠে এসেছে কখনো সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, আবার কখনো বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে হেমন্ত সরেন অথবা বিরোধীদলের নেতাদের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করে সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ করে প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া তো দূরের কথা, শুভেন্দুর বিষবাক্য আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপির ভোটারদের।
Adhikari campaigned for BJP in Jamtara and Nala assembly constituencies of Jharkhand.
Bjp lost Nala by 10,483 votes and Jamtara by 43,676 votes!
Adhikari was also in charge of the seats adjacent to Bengal, BJP has lost most of them!
‘ক্ষুব্ধ’ চম্পইকে দলে টেনে এ বারের ভোটে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তিনি নিজে সেরাইকেলায় জিতলেও ঘাটশিলায় হেরেছেন তাঁর পুত্র বাবুলাল। কোলহান ডিভিশনে (পূর্ব ও পশ্চিম সিংভূম, খরসঁওয়া, সেরাইকেলা জেলা) জেএমএম-কংগ্রেস জোটকে রুখতে পারেননি চম্পই। অন্য দিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে হেমন্তের তোলা চক্রান্তের অভিযোগ আদিবাসী সমাজে মান্যতা পেয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করেছেন, রাজনৈতিক চক্রান্ত করেই শিবু-পুত্রকে দুর্নীতি মামলায় ‘ফাঁসিয়েছে’ নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
পাশাপাশি, চম্পইয়ের বিরুদ্ধে জেএমএমের দেওয়া ‘গদ্দার’ তকমা বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়ে গিয়েছে। কতকটা ২০২১ সালে বাংলায় ‘নীলবাড়ির লড়াই’য়ে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের ‘গদ্দার’ স্লোগানের মতোই। ঘটনাচক্রে, এ বার ঝাড়খণ্ডে বাঙালি ভোট পেতে বিজেপির ‘বাজি’ ছিলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর কংগ্রেস ভরসা করেছিল প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর উপর। সেই অধীর চৌধুরী যিনি নিজের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রেও জিততে পারেননি এবারের লোকসভায়।
তবে শুধুমাত্র প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে নয়, বাংলার যে ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে এবার উপনির্বাচন হল তার মধ্যে নৈহাটিতে ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো বারবার ছুটে গিয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে রীতিমতো রেকর্ড মার্জিনে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।
তৃণমূলে থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের অবজারভার থাকার ধরণ উত্তরবঙ্গে গোটা তৃণমূলের সংগঠন নাকি নিজের হাতের তালুর মত চেনেন বলে দাবি করার সুখ হিন্দুর উপরে দায়িত্ব ছিল মাদারিহাট এবং কোচবিহারের সিতাই বিধানসভা উপনির্বাচনের। এই দুই কেন্দ্রেই শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছে বিজেপি।
আবার সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর 24 পরগনার হাড়োয়া বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারী কে প্রচারে পাঠানোর ঝুঁকি নেয়নি বিজেপি। তবে শুভেন্দু বারে বারে ছুটে গিয়েছেন বাঁকুড়ার তালডাঙরা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকা বলে পরিচিত মেদিনীপুর বিধানসভার প্রচারে। এই দুই কেন্দ্রেও নিশ্চিতভাবে হেরেছে বিজেপি।