সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“মমতাকে বহিষ্কারের প্রায়শ্চিত্ত আজও করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে।” মমতাকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কারের পরে প্রায় তিন দশক কেটে গেলেও এভাবেই প্রকাশ্য জনসভা থেকে আক্ষেপ করলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
মমতাকে বহিষ্কারের প্রায়শ্চিত্ত আজও করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। প্রায় ৩ দশক পেরিয়ে গেলেও আফসোস যাচ্ছে না কংগ্রেস নেতাদের। শনিবারও প্রবীন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য আফসোসের সুরে বলছিলেন, ‘সেদিন মমতাকে বহিষ্কার করা ঠিক হয়নি। আজও প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে।’
১৯৯৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশন। নেতাজি ইন্ডোরে সেই সভাস্থলে সোমেন মিত্র, প্রণব মুখোপাধ্যায়, সীতারাম কেশরীর মতো নেতারা। অথচ সভায় নেই তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ততদিনে মমতার জনপ্রিয়তা চরমে। যুবনেত্রী থেকে জননেত্রী হয়ে উঠেছেন। নেতাজি ইন্ডোরে যখন কংগ্রেসের অধিবেশন চলেছে, তখনই স্টেডিয়ামের বাইরে কর্মীসভা করেছিলেন মমতা। তাতে রীতিমতো জনজোয়ার দেখা যায়। সেদিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সোমেন মিত্র এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসঙ্গে চলতে পারবেন না। কংগ্রেস হাই কম্যান্ডকে তখন সোমেন এবং মমতা- দুজনের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হত। সীতারাম কেশরী সেদিন সোমেনকে বেছে নিয়েছিলেন।
সেটা আন্দাজ করে ২২ ডিসেম্বর মমতা নতুন দল তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তার আগেই অবশ্য কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রদীপ ভট্টাচার্য মনে করছেন, সেদিনের সেই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক ভুল কংগ্রেসের। যার খেসারত আজও দিতে হচ্ছে। শনিবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের কাছে সোমেন মিত্রর মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রদীপ বলছিলেন, “সেদিন সোমেনের উপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল যে মমতাকে বহিষ্কার করতে তিনি বাধ্য হন। তার প্রায়শ্চিত্ত আজও কংগ্রেস দলকে করতে হচ্ছে।”
প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “সেদিন আমি শ্রীরামপুর থেকে ফিরছিলাম। সোমেনদার ফোন এল। জানলাম, সীতারাম কেশরী ফোনে সোমেনকে বলেছেন, মমতাকে বহিষ্কার করতে হবে। আমরা করেছি, তোমাকেও করতে হবে। আমি সোমেনকে বলেছিলাম, তুমি করো না। কিছুতেই করো না। কিন্তু সেদিন যে চাপ তৈরি হয়েছিল তাতে সোমেন বাধ্য হয়েছিল। তার প্রায়শ্চিত্ত আজও করতে হচ্ছে। জানি না এই খাদ থেকে আমরা কবে এবং কীভাবে উঠে আসতে পারব।”
তবে প্রদীপ ভট্টাচার্যের এই আক্ষেপ নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তুমুল চাপান উতোর। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করবেন, সেটা তাঁকে ঠিক করতে হবে। এই রাজীব গান্ধী না থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেত্রী হতেন না। সোনিয়া গান্ধী না থাকলে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হতেন না। সেই কংগ্রেসকে খতম করার জন্য এই বাংলায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” অধীরের কটাক্ষ, “আজকে কারোর আফসোস হতে পারে, কারণ সামনে রাজ্যসভার ভোট রয়েছে।”
এদিকে প্রদীপ ভট্টাচার্যের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “একদম সঠিক কথা বলছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। সিপিএমের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই রাজ্যের কংগ্রেস সেই সময় সিপিএমকে ভর করে চলছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উগ্র সিপিএম বিরোধিতার উপর ছিলেন। সেই সময় ২১শে ডিসেম্বর ১৯৯৭ মমতাকে বহিষ্কার করল কংগ্রেস। এরপর ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি তৃণমূলের জন্ম নিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কংগ্রেসই আসল কংগ্রেস সেটাই দেখা গেল এরপর। প্রদীপ ভট্টাচার্য যা বলেছেন তা সঠিকই বলেছেন।”