সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
মালদার নিহত তৃণমূল নেতা দুলাল ওরফে বাবলা সরকারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে বহিষ্কার করল তৃণমূল। ৬ বছরের জন্য তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার একথা জানালেন মালদহের তৃণমূল সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সি। বুধবার দুলাল সরকারের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ।
নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন, বাড়ির সামনে গুলি করে খুন করা হয় মালদার জেলা তৃণমূল সহ সভাপতি দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে। সেই ঘটনার ৬ দিনের মাথায়, প্রায় ২১ ঘণ্টা ম্যারাথন জেরার পর গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলেরই ইংরেজবাজারের শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে। ধৃত ৫ জনের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা নরেন্দ্রনাথকে। খুন হওয়া তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার ইংরেজবাজার পুরসভার বর্তমান কাউন্সিলর। আর ধৃত তৃণমূল নেতা নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি এই ওয়ার্ডেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর। এবার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিল তৃণমূল। মালদায় তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় গ্রেফতারির পর দল থেকে বহিষ্কৃত করা হয় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে। দুলাল সরকার খুনে বারবার ‘বড় মাথা’র জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এরপরই তৃণমূলের শহর সভাপতিকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করল দল।
গতকাল এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে নিহতের স্ত্রী চৈতালি সরকার বলেন, “আমার যেটা মনে হচ্ছে, পুলিশ সঠিক তদন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে আরও কিছু মাথা থাকতে পারে, আমি আন্দাজ করছি। আমার নেত্রী, আমার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উপরে এবং রাজ্য সভাপতি-সহ আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে ভরসা রেখেছি।”
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, মালদার তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারকে খুনের কথা কবুল করেছেন দলের ইংরেজবাজার শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। পুলিশ সূত্রে খবর। ইংরেজবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মালদার তৃণমূল জেলা সহ সভাপতি দুলাল ওরফে বাবলা সরকার খুনে মূল চক্রী তাঁর একদা বন্ধু ও একই পাড়ার বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কুখ্যাত দুষ্কৃতী স্বপন শর্মা। তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুনের জন্য দেওয়া হয়েছিল ৫০ লক্ষ টাকার সুপারি। এমনই দাবি করেছে পুলিশ। দুলালকে খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দুই শার্প শ্যুটার-সহ ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে।
এখনও অধরা দুই অভিযুক্ত কৃষ্ণ ওরফে রোহন রজক ও বাবলু যাদব। তাদের খোঁজ চলছে। তবে ঘটনার ৭ দিন পরেও খুনের মোটিভ নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ।
তৃণমূল নেতা খুনে এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম জানান, পাঁচ ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নরেন্দ্রনাথকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁকে এবং স্বপনকে মঙ্গলবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সকালে দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়। বুধবার নরেন্দ্রনাথ এবং স্বপনকে আদালতে হাজির করানো হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতে পুলিশ জানায়, টাকার লেনদেন, ফোনের কল রেকর্ডিং ইত্যাদি দেখে ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুপ্রতিম বলেন, ”স্বপন এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। বোমাবাজি, খুন, দাঙ্গাহাঙ্গামায় তাঁর নামে অজস্র অভিযোগ রয়েছে। তিনি এবং নরেন্দ্রনাথ এই ঘটনার (দুলাল খুনে) মূলচক্রী ছিলেন। কিন্তু কী কারণে তাঁরা টাকা দিয়েছিলেন, এখনও জানা যায়নি। এই খুনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। মোট চার দুষ্কৃতীকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন এখনও পলাতক।”