শোভন গায়েন। কলকাতা সারাদিন।
“এখানে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই। পশ্চিমবঙ্গে যে সরকারটা আছে সেটা জামাত – শিবিরের সরকার বলে আমি মনে করি।” এভাবেই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কলকাতা বইমেলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে (ভিএইচপি) স্টল করতে বাধা দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার রাজভবনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ‘জামাতিদের সরকার’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আদালতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে সাম্প্রদায়িক সংগঠন বলা হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট হয় হিন্দুদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি কী।
শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আরও বলেন, “কোর্টে যে ভাবে সরকারি উকিলকে দিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে সাম্প্রদায়িক সংগঠন বলা হয়েছে তাতে প্রমাণ হয়েছে এখানে জামাতিদের সরকার আছে। এখানে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই। পশ্চিমবঙ্গে যে সরকারটা আছে সেটা জামাত – শিবিরের সরকার বলে আমি মনে করি। মুখ্যমন্ত্রীর মুর্শিদাবাদের সভায় ইমাম থাকে। আর সেই মুখ্যমন্ত্রীর সরকারের আইনজীবীরা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টল বন্ধ করে।”
প্রতি বছরের মতো এবারও কলকাতা বইমেলায় স্টল করার জন্য পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কাছে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) শাখা সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কিন্তু গিল্ড তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর ভিএইচপি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলার শুনানিতে বিচারপতি জানতে চান, প্রতিবার অনুমতি দেওয়া হলেও এবার কেন দেওয়া হল না? জবাবে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন এবং তাদের বিভিন্ন বইয়ের বিষয় অত্যন্ত সংবেদনশীল। শনিবার এই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সিনহা গিল্ডের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এই রায়ের পরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শোরগোল শুরু হয়।
অন্যদিকে, শনিবার লালবাগে মুর্শিদাবাদ স্টেশন লাগোয়া রেলের ময়দানে সভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। আপনি সবার মুখ্যমন্ত্রী হলে আপনি ইমাম সাহেবের সঙ্গে আমাদের মোহন্ত, মহারাজ, পুরোহিতদেরও ডাকতেন। আপনি সরকারি সভায় আড়াই হাজার টাকা বেতন দেওয়া ইমামকে দেখিয়ে বলছেন, আপনি সামলেছেন, আপনার বক্তৃতা আমি শুনেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। আপনি সবার মুখ্যমন্ত্রী হলে আপনি ইমাম সাহেবের সঙ্গে আমাদের মোহন্ত, মহারাজ, পুরোহিতদেরও ডাকতেন। বৌদ্ধদেরও ডাকতেন। অন্য ধর্মে যারা ধর্মপ্রচারক তাদেরও ডাকতেন। আপনি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেন। আপনি তোষণের রাজনীতি করেন। ভরতপুরের বিধায়ক, যিনি বলেছেন, আমরা ৭০ আর ওরা ৩০ আমাদের এখুনি কেটে ভাগিরথীতে ভাসাবেন তাকে আপনি মঞ্চে বাড়তি সম্মান দিয়ে তার ওই বক্তব্যকে সমর্থন করে গেছেন।”
এর পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, “সারাক্ষণ হিন্দু – মুসলমান করে গিয়েছেন। উনি বলে গিয়েছেন মালদা ও মুর্শিবাদে সংখ্যালঘু হিন্দুদের দেখভাল করে রাখার দায়িত্ব এই ২ জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মুসলিমদের। হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মুসলমানদের হাতে দিয়ে গিয়েছেন। আপনি মেনে নেবেন? এটা মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা হওয়া উচিত? তাহলে পুলিশ কীসের জন্য? সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। আপনি শুধু ১৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রী নন, ১৪ বছরের পুলিশমন্ত্রী। মুসলিমদের সুরক্ষায় হিন্দুদের থাকতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথার প্রতিবাদে গর্জে উঠুন।”