সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“জঙ্গিমুক্ত, মৌলবাদীমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ গড়বই। মুসলিমদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু, যারা ওপার থেকে ঢুকছে, এই লড়াই তাদের বিরুদ্ধে।” এভাবেই প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রতিজ্ঞার কথা শোনালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
কাঁটাতার না-থাকার সুযোগ নিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। ভারতে ঢুকে ফসল কেটে নিয়ে যাওয়া।
গত কয়েকদিন বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বারবার মালদহের শুকদেবপুরে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা বাংলাদেশিদের আক্রমণের জবাব দিয়েছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে সেই শুকদেবপুরে মিছিল করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মিছিল শেষে বাংলাদেশের ইউনূস প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। একইসঙ্গে সীমান্তে কাঁটাতার বসাতে জমি না দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করলেন।
এদিন সবদলপুর বিওপি থেকে শুকদেবপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিমি মিছিল হয়। বর্ডার রোড দিয়ে সেই মিছিল যায়। এরপর শুকদেবপুর হাইস্কুল সংলগ্ন মাঠে বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু। মিছিলের আয়োজনকারীদের দাবি, অরাজনৈতিক এই মিছিলে হাজার হাজার মানুষ হেঁটেছেন। স্বতঃস্ফূতভাবে মিছিলে যোগ দেন তাঁরা। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে সীমান্ত দিয়ে যে মিছিল হয়েছে, সেখানকার দেড় কিলোমিটার সীমান্তে কোনও কাঁটাতার নেই। কাঁটাতার বসাতে গেলে বিএসএফ-কে বাধা দিয়েছিল বিজিবি। আবার বাংলাদেশিরা ভারতে ঢুকে ফসল কাটার চেষ্টা করলে সীমান্তের বাসিন্দারা বাধা দিয়েছিলেন। বিএসএফ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে পালিয়েছিল বাংলাদেশিরা।
সেকথা এদিন উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন, “আপনারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে লড়াই করেছেন। তার জন্য আপনাদের স্যালুট জানাই। রাষ্ট্রবাদের পক্ষে যুবকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ। প্রবীণরাও এসেছেন। শুকদেবপুরের মানুষ দেশের সৈনিক হিসেবে লড়াই করেছেন।”
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার বসানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের কর্মচারীরা বিএসএফ-কে আক্রমণ করেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ৫৯৬ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতার নেই। জমি দেয়নি রাজ্য। জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষকদের দাবি মতো টাকা দিতে প্রস্তুত কেন্দ্র। তারপরও জমি অধিগ্রহণ করতে দেয়নি রাজ্য। কারণ, রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে দখল করতে চায় বর্তমান শাসকদল। সেজন্য জমি দিচ্ছে না। জনসংখ্যার বদল ঘটিয়ে ভোটব্যাঙ্ককে নিশ্চিত রাখতে চায়।”
এদিন শুকদেবপুর থেকে বাংলাদেশের ইউনূস প্রশাসনকেও তীব্র আক্রমণ করেন শুভেন্দু। বলেন, “ভারতের সামরিক শক্তি এখন অনেক উপরে। আমাদের ম্যান পাওয়ার লাগবে না। কয়েকটা ড্রোন ছেড়ে দিলেই কেল্লাফতে। এই মশা-মাছিরা যদি আমাদের বিরুদ্ধে চোখ তুলে, তাহলে জানবেন স্যাকরার ঠুকঠাক, কামরার এক ঘা।”
ইউনূস প্রশাসন কেন সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াতে চাইছে, সেই ব্যাখ্যাও দেন শুভেন্দু। বলেন, “ভারত শক্তিশালী দেশ। এরা আঁচড় দিচ্ছে, ঢিল ছুড়ছে। বিএসএফ ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশে এখন একটা মৌলবাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তারা ওখানে সরকার চালাতে পারছে না। হিন্দুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। ওখানে আইনশৃঙ্খলা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই, যুদ্ধের জিগির তুলে, সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে সুদখোর ইউনূস দেশপ্রেমের জিগির তুলে টিকে থাকতে চান। তাই সীমান্তে উত্তেজনা হচ্ছে। ভারতের একফোঁটা জমি কারও কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা নেই।”