সুমন তরফদার। কলকাতা সারাদিন।
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও দুর্নাম ছিল না, কিন্তু এখন কাদের জন্য কালির ছিটে গায়ে লাগল মমতার?” তার প্রেক্ষিতে এক সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক দাবি করলেন বিধায়ক মদন মিত্র। আইপ্যাককে নিশানা করে মদন মিত্র বলেন, “সব থেকে বড় কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও দুর্নাম ছিল না। যেটুকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে কালি লেগেছে, তা প্যাকওয়ালাদের জন্য।” তিনি আরও বলেন, “প্যাকওয়ালাদের জন্যই বাংলার বাইরে থেকে সুযোগসন্ধানী একদল এল, মন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলত, আমি ওমুক প্যাক থেকে এসেছি, এই কাজটা কালকের মধ্যে ছাড়তে হবে। কোনও প্যাক ছাড়াই আমরা উপনির্বাচনগুলো জিতেছি, মিটিং মিছিল করছি।”
টাকার বিনিময়ে দলে যে পদ বিক্রি হচ্ছে, সে কথা আগেই বলেছিলেন মদন। তিনি দলের একাংশের উদ্দেশে সে কথা বলেছিলেন কিনা, তা নিয়ে দল অন্দরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই বিতর্কের ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই মদন মিত্র নাম না করে আইপ্যাক সংস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আর এই এজেন্সির জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে কালির ছিটে লেগেছে বলে দাবি করেন তিনি। এবার সেই একই ঢঙে কামারহাটির বিধায়কের দাবি, তৃণমূলে দুর্নীতি শুরু করেছে ‘ব্যাগপ্যাক’। তারাই এই পথটা খুলে গিয়েছে। এক জয়গায় ৮-১০ টা নাম ভাসিয়ে দিয়েছে। অন্য রাজ্যের লোক টিকিট পেতে ১-২ কোটি টাকা দিতে চাইছে। প্রার্থী করে দেওয়ার নামে টাকা চেয়েছে আইপ্যাক। আইপ্যাক তৃণমূলকে প্যাকআপ করতে চায়।
মদন মিত্র বলেন, এর আগে যখন তিনি এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন, তখন তাঁর কথার ব্যাখ্যা অন্যভাবে করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সব ব্যাপারটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে রয়েছে। বিধায়কের কথায়, “আসলে তেমনটা নয়, আমি করজোড়ে বলছি, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী নই অনুগত। আমার বুক চিরলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যাবে। আমার কথায় তিনি যদি কখনও দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে তা আমাকে বললে আমি রাজনীতি ছেড়ে বসে যাব।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম তা হল, এই গুজরাতি, মাড়োয়ারি, বাইরে থেকে কিছু লোক এসেছে। এদের হাতে কাঁচা পয়সা রয়েছে। তারা বলছে টিকিট দাও, কত টাকা লাগবে? ১ কোটি, ২ কোটি টাকা, নিয়ে নাও! মমতা আর স্বচ্ছতা একই জিনিস। হংস পাখায় কখনও দাগ লাগে না।”
২০২২ সালের পুরসভা নির্বাচনের সময়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের দেওয়া প্রার্থীর তালিকা এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের তালিকার পার্থক্য নিয়ে সরগরম হয়েছিল শাসকদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। সেই ঠোকাঠুকি ধরা পড়েছিল গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও। কিন্তু অতি সম্প্রতি সেই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে দলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়কদের উদ্দেশে তাঁকে বলতেও শোনা গিয়েছে, কোনও প্যাকফ্যাক তিনি মানেন না। প্যাকের নাম করে কেউ ফোন করে কোনও তথ্য চাইলে, যাতে কোনও বিধায়করা না দেন, তাও দলের পরিষদীয় বৈঠকে নিশ্চিত করে দেন তিনি।