সুহানা বিশ্বাস। কলকাতা সারাদিন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি হস্টেল সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হস্টেলগুলিতে তালা ঝুলিয়ে দিতে হবে। আদালতের নির্দেশ, পুজোর ছুটির সময় যেন কোনও বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারবে।
কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের আরও নির্দেশ, পুজো শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধান-এই সব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার পর হস্টেলগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে। আদালত এ-ও বলেছে, ছুটির পর আবার হস্টেল খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। পুজোর ছুটি চলাকালীন যাতে সমস্ত হস্টেলের তালা বন্ধ থাকে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাদবপুর থানাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, যাদবপুর থানার পুলিশ পুরো পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখবে। প্রয়োজনে পুলিশি সাহায্য নিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুজোর ছুটি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত হস্টেলের ঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও হস্টেলের ঘর যাতে খোলা না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে যাদবপুর থানার পুলিশকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ওপর হামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেখানে সিসিটিভি লাগানো থেকে শুরু করে বহিরাগত তত্ত্ব উঠে এসেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুজোর ছুটির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও হস্টেল খুলে রাখা যাবেনা। পুজোর সময় যাতে কোনো বহিরাগত হস্টেলে ঢুকতে না পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যাদবপুর থানার পুলিশকে। পুজোর পর খুলতে হবে হোস্টেল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে কড়া নজরদারির কথাও বলা হয়েছে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় সিসিটিভি বসানো-সহ একাধিক দাবিতে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয়েছে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত বহিরাগতদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে৷ বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে সিসিটিভি-সহ ভিতরে পুলিশের নিরাপত্তার ব্যবস্থার দাবিতে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে। এর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল৷
আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘মাননীয় বিচারপতি একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যখন রায় দিচ্ছেন, তখন বুঝতে হবে বাকি ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর রায় নেই। তাহলে যাদবপুর নিয়ে এরকম উদ্বেগ এবং শঙ্কার কারণ আছে বলেই এই ধরনের রায় হচ্ছে। ৩১টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এক নিয়ম আর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এত কড়াকড়ি, এত বিধিনিষেধ, নিয়ম-কানুন তাহলে মাননীয় বিচারপতিও জানেন যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কারা কীভাবে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। আমি বিচারপতিকে, যিনি এই সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছেন আমি তাঁকে স্বাগত জানাই।’