উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের মধ্যেই হামলার ঘটনা। আক্রান্ত বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সোমবার বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হল দুই নেতাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে খগেন মুর্মুকে। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা হয়।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই উঠছে অভিযোগ। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার ঘটনা। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন বিধায়ক সাংসদ গাড়িতে যাচ্ছিলেন বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে।আচমকাই দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শঙ্কর ঘোষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও, হাসপাতালে থাকায় উত্তর দিতে পারেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছে। বাটাম দিয়ে মেরেছে। খগেন দা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’
উদয়ন গুহ তিনি বলেন, ‘কে বলল এটা তৃণমূল করছে? সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে এই কাজ করতে পারে।’ শঙ্কর ঘোষ একটি ভিডিয়ো সামনে এনেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, খগেন মুর্মু রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়ির মধ্যে বসে রয়েছে। রক্তে তাঁর পাঞ্জাবী ভিজে যাচ্ছে। ভেঙে গিয়েছে পুরো কাচ। হামলার মুখে পড়ে যখন কোনও ক্রমে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন সাংসদ ও বিধায়ক, ঠিক সেই সময় তাঁদের পিছন দিক থেকে দুষ্কৃতীরা হামলা করে বলে অভিযোগ। রীতিমতো প্রাণভয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িতে ওঠার সময়ই পিছন দিক থেকে মারধর করা হয়েছে তাঁদের। এই ঘটনায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর সময় এটা। অথচ এরকম একটা সময়ে রাজনীতি করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। সাংসদকে প্রাণে মেরে ফেলার মতো করে আক্রমণ করা হল, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ গোটা ঘটনায় চরম চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। তবে অভিযোগ উড়িয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। সাংসদ-বিধায়ক হিসেবে ওরা ব্যর্থ, তারই ফলে মানুষ ক্ষোভ উগরে দিয়েছে।’
শনিবার রাত থেকেই প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। পাহাড় থেকে সমতল—সব জায়গায় ধস, প্লাবন আর মৃত্যুর মিছিল। ভেঙে গিয়েছে সেতু, কালভার্ট, বহু বাড়িঘর। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, দুর্যোগে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও বেসরকারি মতে, মৃতের সংখ্যা ২৮।
এমন পরিস্থিতিতে এদিন দুর্গত এলাকায় গিয়েছিলেন বিজেপির সাংসদ ও বিধায়ক। খগেন মুর্মুর গাড়িতেই ছিলেন শঙ্কর। অভিযোগ, নাগরাকাটায় পোঁছতেই তাঁদের দিকে তেড়ে আসে একদল দুষ্কৃতী। বাঁশ, লোহার রড, পাথর দিয়ে মারধর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় গাড়িতেও। গুরুতর আঘাত লাগে সাংসদ খগেন মুর্মুর। রক্তে ভেসে যান তিনি। আক্রান্ত হন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও। পরে শঙ্কর বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। চালকের তৎপরতায় দ্রুত এলাকা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।’ ইতিমধ্যে আক্রান্ত সাংসদ-বিধায়ককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাংসদের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। খবর পেয়ে শিলিগুড়ি এয়ারর্পোট থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। অন্যদিকে এ ব্যাপারে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দিলীপ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত, উত্তরের মানুষ ভাসছে। আর সাহায্য করতে গিয়েও আক্রান্ত হলেন আমাদের সাংসদ-বিধায়ক। রাজ্যে যে আইনের শাসন নেই। তা আবারও স্পষ্ট হল।’
তবে বিজেপির তোলা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। কারও হাতে কি তৃণমূলের পতাকা ছিল? আসলে সাংসদ-বিধায়ক হিসেবে ওঁরা ব্যর্থ, উস্কানি দিতে গিয়েই মানুষ তাঁদের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছে।’
অন্যদিকে, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘প্রথমেই আমরা স্পষ্ট জানাতে চাই — আমাদের দল কোনো ধরনের সহিংসতাকে সমর্থন করে না। আজ যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিজেপির নিজের কর্মফল। যখন সাধারণ মানুষ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তখন বিজেপি নেতারা ১০টিরও বেশি গাড়ির কনভয় নিয়ে শুধুমাত্র ফটোশুটের জন্য এলাকায় গিয়েছিলেন, কোনো ত্রাণ কার্যক্রম ছাড়াই। এতে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং ঘটনাটি ঘটে। এটি বিজেপির দীর্ঘদিনের অন্যায় ও মানুষের প্রতি অবহেলার ফল। মানুষকে আগে বঞ্চিত করুন, তারপর তাদের দুঃসময়ে গিয়ে ফটো-অপস করুন — এটাই বিজেপির কাজের ধারা। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা শুরু থেকেই মাটিতে থেকে নিরলসভাবে মানুষকে সাহায্য করে চলেছেন — বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া যোদ্ধাদের মতো কেবল পোস্ট দিয়ে নয়, বাস্তবে পাশে থেকে।’
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দিল্লি থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্যের নেতাদের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে।