প্রিয়াঙ্কা মান্না। কলকাতা সারাদিন।
এইভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না। কোনও ব্যক্তি বিচার করতে পারেন না, কে দোষী আর কে দোষী নয়। কেউ এভাবে আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের ভাজপা শাসিত রাজ্য গুলিতে যে বুলডোজার নীতি চালু হয়েছে তা নিষিদ্ধ করে ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
বিচার ছাড়া কোন অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত বেআইনি এবং সংবিধান বিরোধী বলে জানিয়ে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই বলেন, সরকার বা প্রশাসন কখনও বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা নিতে পারে না। প্রশাসন কখনই একজন ব্যক্তিকে দোষী ঘোষণা করতে পারে না। যদি শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে কারও বাড়ি ভাঙ্গা হয়, তাহলে আইনের শাসন প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। প্রশাসন কখনই বিচারকের ভূমিকা নিয়ে একজন অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে যেভাবে কখনো সরকারের বিরুদ্ধে ইবাদত করা ব্যক্তিদের আবার কখনো বা কোন অপরাধে অভিযুক্তদের বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে রাতারাতি বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রথা চালু হয়েছে, সেই প্রথাকে অসাংবিধানিক এবং অমানবিক বলে আজ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
বুলডোজার জাস্টিসকে কার্যত তুলোধনা করে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিতে গিয়ে জানায়, সংবিধানের ১৯ ধারা অনুযায়ী বাসস্থানের অধিকারও মৌলিক অধিকার। যে সরকারি আধিকারিকরা আইন নিজের হাতে নিয়ে এ ধরনের কাজ করছে তাদের আইনের কাঠগড়ায় আনতে হবে।
শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি গাভাই জানান, মাথার উপর ছাদ গড়ে তোলা প্রত্যেক পরিবারের স্বপ্ন। পুলিশ-প্রশাসনের কারও আশ্রয় কেড়ে নেওয়ার অধিকার রয়েছে কি না, এখানে প্রশ্ন সেটাই। বিচারপতি গাভাই বলেন, গণতান্ত্রিক সরকারের ভিত্তিই হল আইনের শাসন। আর আইন বলে, আগেভাগে অভিযুক্তকে দোষী বলা যায় না। সরকারের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে সংবিধান নাগরিকদের কিছু অধিকার দিয়েছে। আইনের শাসন বলে, স্বেচ্ছাচার করে কারও সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া যায় না।
কোনও অপরাধী বা অভিযুক্তের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়ার যুক্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্ট বলে, যে প্রশ্নটি বিবেচনা করা উচিত, তা হল যদি কোনও পরিবারের একজন মানুষ অপরাধ করে, তাহলে সেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা, যারা অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত নয়, তাদের বাসস্থান শুধুমাত্র একজনের জন্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি? সংবিধান কখনওই এ বিষয়ে মান্যতা দেয় না।রাতের অন্ধকারে মহিলা শিশুদের বাড়ি থেকে টেনে বের করে দেওয়া হচ্ছে এই দৃশ্য কখনই কাম্য নয়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা ছাড়া অথবা বিশেষ কোন কোন ক্ষেত্রে বুলডোজার চালিয়ে বাড়ি বা বেআইনি নির্মাণ ভাঙা যাবে তার জন্য গোটা দেশে এক রকম নির্দেশিকা জারির কথা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আজ বলে, আগাম শোকজ নোটিস ছাড়া কোনও বাড়ি ভাঙা যাবে না। নোটিস দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পুরসভার আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সময়ের পরে বা অন্তত ১৫ দিন পর বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে হবে। রেজিস্টার্ড পোষ্টের মাধ্যমে নোটিস পাঠাতে হবে। বেআইনি নির্মাণের বাইরে সেই নোটিস আটকাতে হবে। নোটিসে কি ধরনের বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, কেন নির্মাণ ভাঙা হবে, তাও স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে।
যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে তার ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ দিতে হবে। এই শুনানি বা মিটিং এর সব মিনিটস রেকর্ড রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত নির্দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য উল্লেখ করতে হবে। ডেমোলিশন বা নির্মাণ ভাঙার গোটা প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফ করতে হবে এবং অনলাইন ডিজি পোর্টালে ৩ মাসের মধ্যে সেই ডেমলিশনের রিপোর্ট আপলোড করতে হবে।
যদি এই নির্দেশ মানা না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু হবে বলেও জানায় সুপ্রিম কোর্ট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককেই যার বাড়ি অন্যায়ভাবে ভাঙ্গা হচ্ছে, তার যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে।