সুমনা মিশ্র। কলকাতা সারাদিন।
বিধ্বংসী এক দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ কেষ্টপুরের মিশন বাজার সংলগ্ন রাজবংশীপাড়া এলাকা। বুধবার সকালে নিউটনের জল প্রকল্পের জন্য তৈরি খালে ডুবে মৃত্যু হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরের এক শিশু ঋতু কোনাইয়ের। আরেক শিশু প্রিয়াংশু কুমারকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি ঘটে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে। এলাকাবাসীর দাবি, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ঋতু এবং উত্তরপ্রদেশের প্রিয়াংশু দুজনেই বস্তি সংলগ্ন খালের ধারে বসে রান্না-বাটি খেলছিল।
মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে গেল বিপদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খেলতে খেলতে প্রথমে প্রিয়াংশু খালের মধ্যে পড়ে যায়। তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে ঋতুও জলে তলিয়ে যায়। প্রিয়াংশুর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা দেখেন, ঋতু অচৈতন্য অবস্থায় খালের ধারে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিধাননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকরা জানান — মাথায় গুরুতর চোট লাগায় শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি।
অন্যদিকে, প্রিয়াংশু সামান্য আঘাত পেলেও বিপদের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গঙ্গার জল প্রকল্পের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গঙ্গার জল প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি খালের ওই অংশ নিয়ম অনুযায়ী ঢেকে রাখা উচিত ছিল। সরকারিভাবে খাল ঢেকে দেওয়ার কাজ শুরু হলেও জমি সংক্রান্ত আইনি জটিলতার কারণে সেই কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি বলে জানা গেছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি খালটা খোলা রাখলে বিপদ হতে পারে। বাচ্চারা এখানে খেলে। কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।”
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ও জাল চুরির অভিযোগ
স্থানীয় কাউন্সিলর সুশোভন মণ্ডলের উদ্যোগে খালপাড়ের বেশ কিছু অংশে আগে জাল লাগানো হয়েছিল, যাতে শিশুদের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কয়েকদিন আগেই সেই জাল চুরি হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এদিন সকালে সেই অভিযোগ ফের সামনে আসতেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি — যদি সেই জালটি আগেই ঠিকমতো থাকত, তাহলে হয়তো ঋতুর প্রাণ যেত না।
করুণ পরিণতি ও প্রশাসনিক নীরবতা
পাঁচ বছরের একটি শিশুর এমন অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে রাজবংশীপাড়ার বস্তি এলাকায়। প্রতিবেশীরা বলেন, “ঋতু খুব চঞ্চল বাচ্চা ছিল, সবার প্রিয়। আজ ওর বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে।” এদিকে প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ওই খালের অংশ ঢেকে দেওয়া এবং বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

একটি ছোট ভুল, কিছুটা অব্যবস্থা আর প্রশাসনিক উদাসীনতায় নিভে গেল এক শিশুর প্রাণ।
কেষ্টপুরের এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল — শহরের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা এমন খোলা জলাশয় ও খাল কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।