শৌভিক তালুকদার। কলকাতা সারাদিন। নয়াদিল্লি।
“এতদিন কোথায় ছিলেন? ছয় বছর পর হঠাৎ করে মনে পড়ল মামলার কথা?”— রাজীব কুমার মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে এভাবেই তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ও বর্তমান রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দায়ের করা মামলার ছয় বছর পর হঠাৎ সক্রিয় হয়েছে সিবিআই। আর সেই আচরণেই ক্ষোভ উগরে দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৯ সালের অক্টোবরে সারদা চিটফান্ড মামলায় রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই। তবে সেই সময়ে মাত্র দুটি শুনানি হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর ধরে মামলাটি কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। হঠাৎ গত শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রিতে ইমেল করে ‘জরুরি শুনানি’র আবেদন জানায় সিবিআই। এরপরই সোমবার প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হয় শুনানি।
শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “২০১৯ থেকে ২০২৫—এই ছয় বছর আপনি কী করছিলেন? ভুলে গিয়েছিলেন যে একটা মামলা করেছিলেন?” এই তির্যক প্রশ্নেই শুরু হয় সিবিআই-এর ভর্ৎসনা।
সিবিআই-এর পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতকে জানান, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজীব কুমারকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিল শর্তসাপেক্ষে, যাতে তিনি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেন। কিন্তু তিনি সেই শর্ত মানেননি। তাই হাইকোর্টের জামিনের নির্দেশ খারিজ করার আর্জি জানানো হয়েছে।
তবে এই দাবি পুরোপুরি মিথ্যা বলে প্রমাণ করেন রাজীব কুমারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব। আদালতে জমা দেওয়া নথিপত্রে তিনি জানান, রাজীব কুমার ২০১৯ সালের অক্টোবরের পর থেকে একাধিকবার সিবিআই-কে চিঠি লিখে তদন্তে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু কখনও কোনও জবাব মেলেনি। গত ছয় বছরে একবারও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়নি।
রাজীব কুমারের আইনজীবীর অভিযোগ, “বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই রাজনীতির উদ্দেশ্যে পুরনো মামলা জাগিয়ে তুলেছে সিবিআই।” তিনি আরও বলেন, “রাজীব কুমার দেশের অন্যতম দক্ষ আইপিএস অফিসার। তাঁকে হেনস্থা ও বদনাম করার জন্যই এই মামলা নতুন করে তোলা হয়েছে।”
প্রধান বিচারপতি গাভাইও এই যুক্তিতে সুর মিলিয়ে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “ছয় বছর ধরে কিছুই করেননি, এখন হঠাৎ এমন তাড়াহুড়ো কেন?” আদালত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য শোনার পরও মামলা খারিজ না করে আগামী ২৭ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজীব কুমার আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে। তদন্তে সহযোগিতার শর্তে সেই জামিন মঞ্জুর হয়। এখন হঠাৎ করে সেই জামিন বাতিলের দাবি তুলেছে সিবিআই। ফলে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে রাজীব কুমারকে ঘিরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট। অন্যদিকে, সিবিআই-এর নীরবতা ও ছয় বছরের গাফিলতি নিয়ে আদালতের কড়া মন্তব্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।